ট্রেনে যাত্রীকে নির্যাতন, সেই পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত

ট্রেনে এক যাত্রীকে মারধর ও মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শহিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে পুলিশ। রোববার (২১ মে) তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম নুরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভুক্তভোগী যাত্রী করিম বাদশা বলেন, গত ১৮ মে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার কমলাপুর থেকে দ্রুতযান এক্সপ্রেসে করে ঠাকুরগাঁওয়ে যাচ্ছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমার চেয়ারের সামনে একটি বাড়তি চেয়ার এনে একজন যাত্রীকে বসান পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শহিদুল ইসলাম। রেলওয়ের একটি ফেসবুক ফ্যান গ্রুপে ওই চেয়ারসহ দুটি ছবি পোস্ট করি। এর ৩০ মিনিট পর ওই পুলিশ কর্মকর্তা আমার কাছে এসে বাসার ঠিকানা জানতে চান। এরপর তিনি জোর করে ট্রেনের ক্যান্টিনে নিয়ে যান। সেখানে দরজা লাগিয়ে দিয়ে হাত থেকে ফোনটি কেড়ে নেন। পরে তোলা ছবি ও ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া ছবিগুলো ডিলিট করে দেন।
আরও পড়ুন : ট্রেনে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় যাত্রীকে পেটালো পুলিশ
তিনি বলেন, শহিদুল ইসলামসহ রেলওয়ে পুলিশের অন্য সদস্যরা জানতে চান ছবিগুলো কেন পোস্ট করলাম। তখন তাদের বলি, সেখানে অতিরিক্ত চেয়ার বসানো অনিয়ম ও দৃষ্টিকটু। এ কারণে ছবিগুলো পোস্ট করেছি। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনজন রেলওয়ে পুলিশ সদস্য আমাকে পেটাতে থাকেন। পরে তারা ফোনটি আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেন। এরপর ভাঙা ফোনসহ আমাকে সিটে পাঠিয়ে দেন। সিটে বসার পরও কয়েক দফা হুমকি দেন। এএসআই শহিদুল কিছুক্ষণ পরপর এসেছেন আর বলেছেন, ঘটনাটি যেন কাউকে না জানাই। এ বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে মাদকের মামলায় কোর্টে চালান করে দেওয়াসহ ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ারও হুমকি দেন। পরে শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর স্টেশনে তারা নেমে যান। এ সময় নাম-ঠিকানা ও ফোন নম্বর নিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সব নাম-ঠিকানা নেওয়া হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সব ব্যবস্থা করবেন।
এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় গেলে বিষয়টি রেলওয়ের বিভাগীয় পর্যায়ে অভিযোগ দিতে বলা হয় বলে জানান করিম বাদশা।
অভিযুক্ত এএসআই শহিদুল ইসলাম বলেন, একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে আমরা পালাক্রমে চারজন পুলিশ বসি। ওই চেয়ারে পূর্বপরিচিত ঠাকুরগাঁওয়ের এক যাত্রীকে বসতে দেয়। পরে করিম বাদশা নামে ওই ব্যক্তি কয়েকটি ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন। বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখে আমার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে করিম বাদশাকে রেলওয়ে ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে মাথায় কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। অন্য অভিযোগগুলো সঠিক নয়।
পার্বতীপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম নুরুল ইসলাম বলেন, করিম বাদশার অভিযোগের কারণে এএসআই শহিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরএআর