বিয়ে করা হলো না অন্তরের, জুলহাসও পারলেন না বিদেশ যেতে

বিয়ে করা হলো না ফরিদপুর সদর উপজেলার উত্তর কবিরপুর গ্রামের আফজাল শেখের ছেলে অন্তর শেখের (২৩)। শুক্রবার (২ জুন) চাচাতো বোনের সঙ্গে বিয়ের দিন নির্ধারণ করা থাকলেও বিয়ের দুই দিন আগেই দুর্ঘটনায় মারা যান অন্তর। অপরদিকে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর জন্য মালয়েশিয়া যাওয়ার কাথা ছিল একই ইউনিয়নের জুলহাসের। কিন্তু অন্তরের মতো মাটি চাপা পড়েছে জুলহাসের বিদেশ যাত্রার স্বপ্নও।
বুধবার (৩১ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার ভাষাণচর ইউনিয়নের জমাদার ডাঙ্গী এলাকায় একটি সেতুর নির্মাণকাজের সময় মাটি চাপা পড়ে মারা যান তিন শ্রমিক। নিহত তিনজনের মধ্যে অন্তর শেখও ছিলেন। এছাড়া ছিলেন একই ইউনিয়নের শেলাকুন্ডু এলাকার কুজুরদিয়া গ্রামের ইসমাইল মীরের ছেলে জুলহাস মীর (২০) ও বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার উদয়পুর উত্তরকান্দি গ্রামের আল আমিন খানের ছেলে জাবেদ খান (২৩)।
জানা যায়, আফজাল শেখ-ঝর্ণা বেগম দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে মেঝ ছেলে অন্তর। সাত বছর আগে পানিতে ডুবে মারা যায় বড় ছেলে জীবন (১৭)। বেঁচে আছে শুধুমাত্র ছোট ছেলে রোহান (৯)। আফজাল শেখ রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করলেও দুই দফা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এখন দিনে এক-দুই ঘণ্টার বেশি রিকশা চালাতে পারেন না। তাই সংসার চালানোর দায়িত্ব ছিল অন্তরের ওপর।
বুধবার (৩১ মে) বিকেলে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও জীবিত অবস্থায় আর ফেরা হলো না তার। ফিরলেন লাশ হয়ে। অথচ আগামীকাল শুক্রবার (২ জুন) চাচাতো বোন আসমা আক্তারের সঙ্গে বিয়ের দিন নির্ধারিত ছিল অন্তরের। কিন্তু বিয়ে করা হলো না অন্তরের। এমনকি উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা অন্তরের পরিবার।
অন্তরের বাবা আফজাল শেখ বলেন, ছেলেরে হারাইছি। কী কবো কন? আমার তাজা ছাওয়াল। ক্যামনে যে কী হইয়া গেল। কারে কবো, নিজেরে নিজের কাছে এখন দোষী মনে হয়। আমার সোনাধন ছাওয়ালডারে অকালে হারাইলাম, এই দুঃখ কইয়া বোঝানো যায় না।

অপরদিকে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর জন্য মালয়েশিয়া যাওয়ার কাথা ছিল একই ইউনিয়নের জুলহাসের। আগামী বুধবার (৭ জুন ) বিমানে ওঠার কথাও ছিল তার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না জুলহাসের। ঘটনার পর থেকে অন্তর ও জুলহাসের বাড়িতে নেমে এসেছে শুনসান নীরবতা। বাড়িতে এসে প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দিলেও তা কোনো কাজে আসছে না সন্তানহারা বাবা-মায়ের।
জানা যায়, ইসমাইল মীর (৬০) ও জোলেখা বেগম (৪৪) দম্পতি দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে ইতির বিয়ে হয়ে গেছে। বড় ছেলে জুয়েল মীরও (৩০) বিয়ে করেছেন। মেঝ ছেলে জুলহাস।
জুলহাসের বাবা ইসমাইল মীর বলেন, আমি গরীব মানুষ। আমি কাজ করতাম পাশাপাশি আমার ছাওয়ালের আয়ে সংসারে অনটন কিছুটা কমতো। ছেলেডা অনেক জোর কইরা কইতো আব্বা আমারে ধার-দেনা কইরা একবার বিদেশ পাঠায় দেও আল্লায় দিলে আমাগো অবস্থা এমন থাকবে না। আজকে কি হইলো স্বপ্ন, আশা সব কবরে চইলা গেল।
কৈজুরী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ফকির মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমার ইউনিয়নের দুটি ছেলে মারা যাওয়ায় ওই দুটি পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পাশাপাশি তারা দুজন পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা দূরীকরণেও ভূমিকা রাখতো। তাদের এমন মৃত্যু আসলে অপ্রত্যাশিত। বুধবার রাতেই তাদের স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
সদরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত গোলদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবারের তরফ থেকে মামলা না করায় ওই তিনটি মরদেহই বিনা ময়নাতদন্তে পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
জহির হোসেন/এবিএস