টানা তিনবার প্রথমস্থান অর্জন করেছে আলীরাজ!

সুঠাম দেহের অধিকারী ‘আলীরাজ’ শিশুদের মতোই চঞ্চল প্রকৃতির। গরুর বাছুরের মতো মনের আনন্দে লাফাতে থাকে। তার এমন চঞ্চলতা দেখে বোঝার উপায় নেই ২৫ মণ ওজনের বিশাল ষাড় এটি।
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামের খামারি গোলাম আজমের আবিব এগ্রো ফার্মের হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান জাতের গাভি থেকে ৪ বছর আগে জন্ম আলীরাজের। গ্রামের নাম আর অনেক আদরের গরু হওয়ায় এর নাম রাখা হয়েছে ‘আলীরাজ’। বাড়ির শিশুদের সঙ্গে খেলা করে প্রাকৃতিকভাবে বড় হয়েছে। দুষ্টামি, লাফালাফি করলেও মানুষের সঙ্গে বন্ধু-সুলভ আচরণ গরুটির। তার বয়সী শিশুরাই এখন তাকে রোজ আদর-যত্ন করে খাওয়ায়।
গরুর মালিকের ছেলে শিশু তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে সে জানায়, গরুটির সঙ্গে সে একসঙ্গে বড় হয়েছে। তবে গরু আর তার বয়স সমান হলেও তার থেকে গরুটি অনেক বড় হয়ে গেছে। প্রত্যেকদিন ষাড়টিকে ঘাস, খড়সহ অন্যান্য খাবার খাওয়ায়। সারাদিন গরুর সঙ্গে সময় কাটে তার।
অন্যান্য ষাড় গরুদের ওজন বেশি হলে সাধারণত নড়া-চড়া করতে অনেক কষ্ট হলেও সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে বড় হওয়া আলীরাজ স্বাভাবিকভাবেই চলা-ফেরা করে। মায়ের সঙ্গে দেশি গরুর মতো লালন পালন হওয়ায় চঞ্চলতা একটু বেশি দেখায় সে। বেশি চঞ্চল স্বভাবের হওয়ায় তাকে সামলাতে দু-তিন জন মানুষ লাগে। গোয়ালের অন্যান্য গরুদের সঙ্গেই থাকে, আলাদা কোনো কক্ষ বা বাড়তি কোনো যত্নের দরকার হয় না। খামারি আকরামের নিজের জায়গায় উৎপাদন করা ঘাস, ভুসি, খৈল ও চালের গুড়া গরুটির খাবার।
নিজের সন্তানের মতো যত্ন করে বড় করা আলীরাজ উচ্চতায় ৫ ফুট এবং প্রস্থে ৮ ফুট। গরুটির সৌন্দর্য ও বিশালতার ফলে টানা তিনবার প্রাণী প্রদর্শনী মেলায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। গরুর মালিক আজম এবারের ঈদে ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান আলীরাজকে। গরুটি দেখতে তার বাড়িতে আসছেন মানুষজন। এমন গরু গ্রামে থাকাও সুনামের বিষয় বলে জানান গ্রামের মানুষ।
গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ আফতাব আলী বলেন, আমার চোখের সামনেই গরুটি ছোট থেকে বড় হয়েছে। অনেক পরিশ্রম করে আলীরাজকে বড় করেছে তার মালিক। এমন গরু আমাদের উপজেলায় আর নেই। বড় গরু পালনে খামারিদের উৎসাহিত করতে নায্য মূল্য দিয়ে বিত্তবানদের গরুটিকে ক্রয় করার আহ্বান জানাচ্ছি।
মনির হোসেন বলেন, আমার বাড়ি ফার্মের পাশেই। ৪ বছর আগে আমার হাতে এই বাছুরটির জন্ম হয়। তারপর ধীরে ধীরে আজ এতো বড় হয়েছে। মায়ার টানে প্রত্যেক দিন এসে দেখে যাই। তাকে খাওয়াতেও ভালো লাগে।
পৌর শহরের বড়পাড়া থেকে গরু দেখতে আসা মাহমুদুল হাসান মিলন বলেন, বিশাল দেহের গরুর খবর শুনে আলীরাজকে দেখতে এসেছি। যেখানেই গরুর খবর শুনি ছুটে যায়। আমি গরু প্রিয় মানুষ। এই গরুকে দেখেও অনেক ভালো লাগেছে। অনেক বড় গরু এটা।
আবিব এগ্রো ফার্মে আলীরাজ ছাড়াও ৯টি গরু, ৫ কেয়ার আয়তনের ২টি পুকুর ও হাঁসের খামার আছে। আবিব এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী গোলাম আজম বলেন, নিজের হাতে উৎপাদনকৃত ঘাস, গুড়া, খৈল, কলাসহ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে গরুকে বড় করেছি। এবার ঈদে ৭ লক্ষ টাকায় বিক্রি করতে চাই। বাড়িতে এসে নিলে কিছুটা ছাড় দেয়া হবে।
বিশ্বম্ভপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আ জ ম সালাহ উদ্দীন বলেন, আলীপুরের গরুটি সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে বড় করা হয়েছে। এর ওজন এক হাজার কেজির কাছাকাছি হবে। গরুটি সার্বক্ষণিক আমাদের তত্ত্বাবধানে ছিল। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য কোনো ওষুধ বা ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়নি। এরকম আরও কয়েকটি গরু আছে উপজেলায়।
সোহানুর রহমান সোহান/এমএএস