ভিটেমাটি হারানোর স্মৃতি ভুলিয়ে চরের মানুষের চোখে সবুজ স্বপ্ন
![ভিটেমাটি হারানোর স্মৃতি ভুলিয়ে চরের মানুষের চোখে সবুজ স্বপ্ন](https://cdn.dhakapost.com/media/imgAll/BG/2023June/untitled-1-20230625141703.jpg)
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর এক বছরে পাল্টে গেছে চরের মানুষের স্বপ্ন। প্রবল পদ্মার ঢেউয়ের সঙ্গে ছিল যাদের নিয়মিত যুদ্ধ এখন তাদের চোখে সবুজ রঙের স্বপ্ন। এক সেতুতেই পাল্টে গেছে তাদের জীবিকার সংগ্রাম। তারা এখন পদ্মা পাড়ের চরে চাষ করছে ফসল। নদীর ভয়াল থাবা থেকে নিজেদের উত্তোরণ ঘটিয়ে সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের নদীর পাড় ও ধুধু বালুচরে সবুজ ফসলের সমারোহ পাল্টে নিয়েছে পাইনপাড়া চরের মানুষের ভবিষ্যৎ।
জাজিরা উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, পদ্মা সেতুর পাইনপাড়া চরের পতিত প্রায় ৪ হাজার বিঘা জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে সেতু উদ্বোধনের কয়েক মাস পর। এই চরের মাটিতে উন্নত মানের চিনাবাদাম, ভুট্টা, শীতকালীন সবজি চাষ হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক মন্দার সঙ্গে নিজেদের বেঁচে থাকার মাধ্যম হিসেবে প্রতি ইঞ্চি জমিতে চাষাবাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর শরীয়তপুরের বিভিন্ন চরসহ প্রতি ইঞ্চি জমিতে চাষ হচ্ছে ফসল। এখনও স্থানীয় প্রশাসন বিভিন্ন পতিত খাস জমি উদ্ধার করে কৃষকদেরকে চাষাবাদে উৎসাহিত করে যাচ্ছে।
পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের পাইনপাড়া চরের মানুষ ফসল উৎপাদন করছে বালুচরে। এ যেন পদ্মা সেতুর মতই আরেক স্বপ্ন ছিল। পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর কোনো স্বপ্নই আর অধরা থাকছে না দখিনের মানুষের। পাইনপাড়া চরের নারী-পুরুষ বালুচরের মধ্যে চাষ করছে ধান, পাট, ভুট্টা, চিনাবাদাম, সরিষা, শীতকালীন বিভিন্ন সবজি।
পাইনপাড়া চরের কৃষক রাজ্জাক মাঝি চরের পতিত জমিতে সবুজের বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভয়ে পাইনপাড়া চরে আগে মানুষ আসত না। এখন পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা পাল্টে যাওয়ায় আমরা এখানে চাষ করছি। ধান, সরিষা, চিনাবাদাম, শীতকালীন সবজি কোনো ফসল নিয়েই আমাদের বাজারে যেতে হয় না। ঢাকা থেকে পাইকাররা এসে ফসলের মাঠ থেকে কিনে নিয়ে যান। পদ্মা সেতুর এক বছরে আমার মতো কয়েক হাজার চরের মানুষের স্বপ্ন পাল্টে গেছে। অনিশ্চিত জীবন থেকে আমরা নিশ্চিত জীবন পেয়েছি।
জুয়েল টেপা নামে অন্য একজন কৃষক বলেন, সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিনের আহার জোগাড় করতে আমার কষ্ট হয়েছে। আর এখন আমি অন্যের আহার যোগাই। সবই সময়ের ব্যবধান। পদ্মা সেতুর দিকে তাকালে মনে হয় একটি স্থাপনা কোটি মানুষের বেঁচে থাকার স্বপ্ন ও সাহস যোগায়।
পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক সেতু পাইনপাড়া চরের কয়েক হাজার মানুষের নতুন করে বাঁচিয়েছে। পাইনপাড়ার মানুষের কষ্ট দেখলে নিজের কাছে খারাপ লাগত। যতটুকু পারতাম সহযোগিতা করতাম। কিন্তু পদ্মা সেতুর সুফলে তারা নিজেরা এখন স্বাবলম্বী।
জাজিরা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদি জামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাইনপাড়া চরের দিকে তাকিয়ে আগে মানুষ নিজেদের ভিটেমাটি হারানোর স্মৃতি স্মরণ করে পদ্মায় চোখের জল ফেলত। কিন্তু বালুচর চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসার পর মানুষের চোখে নতুন স্বপ্ন জেগেছে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুল হাসান সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পাইনপাড়া চরের পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। পাইনপাড়ায় যে ফসল চাষ হচ্ছে, তা নিজেদের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণে সহযোগিতা করবে। পাইনপাড়া চরে ভবিষ্যতে গড়ে উঠবে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল। চরের মানুষের মৌলিক চাহিদা শহরমুখী মানুষের মতই নিশ্চিত করা হবে। এতকিছুর মূলে রয়েছে পদ্মা সেতু। সেতু না হলে মানুষগুলো নতুন স্বপ্ন দেখতে পারত না।
সাইফুল ইসলাম সাইফ রুদাদ/আরকে