ভরা মৌসুমেও নদীতে মিলছে না ইলিশ, হতাশ জেলেরা

ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর অভয়াশ্রমে পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। নদীপাড়ের আড়তগুলোতে নেই চিরচেনা সেই হাঁকডাক। ফলে হতাশায় দিন কাটছে আড়তদার ও এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া জেলেদের।
এদিকে নদীতে ইলিশের সংকট দেখা দেওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে বাজারে। সরবরাহ না থাকায় ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।
জেলেরা জাল, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী চষে বেড়াচ্ছেন। ভোর থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত জাল ফেলেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না। এতে তাদের খরচের টাকাও উঠে আসছে না।

মৎস্য বিভাগ ও জেলেরা জানায়, নদীতে চর জাগা, নাব্যতা সংকট, উজানের প্রবাহ ও বৃষ্টি কম হওয়ায় নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়াও নদীর গতিপথ পরিবর্তন, উজানে পাহাড়ি ঢল না থাকায় এখনো কাঙ্ক্ষিত রুপালি ইলিশ ধরা পড়ছে না। আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাস পুরো মৌসুম। প্রতি বছর এ সময়ে ইলিশ বেচাকেনায় দৌড়ঝাঁপ থাকে। অথচ এবছর ঘাটগুলোতে তার বিপরীত চিত্র।
এদিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ভোলা সদরের মেঘনা নদীর তীরবর্তী ইলিশা ঘাট, রাজাপুর, কাচিয়া, ধনিয়া, তুলাতুলি ও জেলেপল্লিতে দলবদ্ধভাবে নদীতে ইলিশ ধরতে গিয়েও খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা। আর যে পরিমাণ ইলিশ পাচ্ছেন তা দিয়ে তাদের নৌকার জ্বালানি খরচও উঠছে না। ফলে দৈনন্দিন সাংসারিক খরচ মেটাতে গিয়ে নতুন করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন তারা।
মাঝি লোকমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বছরের এই সময় নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত কিন্তু এখন যে মাছ পাই তা দিয়ে আমাদের মাঝি-মাল্লার নৌকার খরচও উঠে আসে না। ধার-দেনা করে হতাশায় আমাদের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে।

ইলিশাঘাটের আড়তদার হারুন মাঝি বলেন, ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের আশায় প্রতিদিনই জাল, নৌকা, ট্রলার ও বরফ নিয়ে দল বেঁধে নদীতে পাঠাচ্ছি জেলেদের। কিন্তু তারা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশা নিয়ে তীরে ফিরছেন। নদীতে মাছ নেই। আমাদের ব্যবসাও নেই। চরম বিপাকে আছি আমরা।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা মো. এমদাদুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে জানান, বর্তমানে নদীতে ডুবো চরের কারণে পানির গভীরতা কম থাকায় সাগর থেকে নদীতে ইলিশ আসতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারণেই নদীতে ইলিশের সংকট রয়েছে। তবে নদীতে পানি বাড়লে ও ভারী বৃষ্টি হলে জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাবে বলে আমরা আশাবাদী। জেলায় প্রায় দুই লাখ জেলের মধ্যে নিবন্ধিত ১ লাখ ৫৮ হাজার জন। ইতোমধ্যে তাদেরকে সরকার বিশেষ ভিজিএফের আওতায় এনেছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, দেশের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৩০ থেকে ৪০ ভাগ আহরিত হয় ভোলা জেলা থেকে।
এএএ