নদীতে পানি বাড়লেই হাবুডুবু খেতে হয় আমাদের

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারে বাগেরহাটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাস্তা উপচে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। জোয়ারের পানির স্রোতে জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ঘাট ও সহস্রাধিক বাড়ি ঘরে পানি উঠে গেছে। বুধবার (২ আগস্ট) দুপুরে জোয়ারে হঠাৎ করে নদী-খালের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
দুপুরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভৈরব নদীর তীরে থাকা হাড়িখালি, মাঝিডাঙ্গা ও মারিয়া পল্লী এলাকার অন্তত ৪০টি বসত ঘর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কারও কারও ঘরের মধ্যেও পানি উঠে গেছে। ছাগল ও গবাদি পশু ঘরের খাটের ওপর রেখেছেন তারা। রান্না ঘরে পানি উঠে যাওয়ায়, খাবার বন্ধ রয়েছে কয়েকজনের। বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প মাঝিডাঙ্গা এলাকাও মাঝে মাঝে প্লাবিত হয়। শুধু হাড়িখালি-মাঝিডাঙ্গা ও মারিয়া পল্লী নয়, বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর, কলাবাড়িয়া, পানিঘাটসহ বেশকিছু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। 
অন্যদিকে পানগুছি নদীর পানিতে মোরেলগঞ্জ উপজেলা সদরের প্রধান বাজার, পৌরসভার একাংশ, উপজেলা পরিষদ চত্বর প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া মোরেলগঞ্জ উপজেলার খাউলিয়া, বহরবুনিয়া, পঞ্চকরণ, তেলিগাতি, হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলার মারিয়া পল্লী গ্রামের প্রত্যয় হালদার বলেন, নদীতে একটু পানি বেড়ে গেলে হাবুডুবু খেতে হয় আমাদের। খুব সমস্যায় থাকি আমরা। এ সময় আমাদের কোনো খোঁজ খবর নেয় না কেউ।
হাড়িখালি এলাকার কামাল শেখ বলেন, আমাদের দিকে কেউ খেয়াল করে না। খালে একটু পানি বেড়ে গেলেই আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। ঘর দুয়ার সব তলাইয়া গেছে। ঘরে যাওয়া লাগে কাছা দিয়া। রান্না বান্না সব বন্ধ।
একই এলাকার মনির শেখ বলেন, আষার-শ্রাবণ মাস এলে খুবই কষ্টে থাকতে হয়। মাঝে মাঝেই পানি উঠে যায়। ভৈরবের পাশে যদি একটি বাঁধ দেওয়া থাকতো তাহলে আমরা কিছুটা শান্তিতে থাকতে পারতাম।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা সদরের বুলি কাজী বলেন, জোয়ারের পানিতে মোরেলগঞ্জ বাজার, উপজেলা চত্বরসহ পৌর শহরের বেশকিছু এলাকায় হঠাৎ পানি উঠে যায়। লোকজনের খুব ভোগান্তি হয়েছে। পানগুছি নদীর পাড়ে টেকসই শহর রক্ষা বাঁধ থাকলে আমাদের এই সমস্যায় পড়তে হতো না।
বহরবুনিয়া এলাকার ইসরাফিল ইসলাম বলেন, চারপাশে নদী-আর খালের মধ্যে আমাদের বহরবুনিয়া ইউনিয়ন। হঠাৎ করে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশকিছু পরিবার জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে বৃষ্টি থাকায় পানি সহজে নামছে না বলে জানান রফিকুল ইসলাম। খাউলিয়া, পঞ্চকরণ, তেলিগাতি ও হোগলাবুনিয়া তেলিগাতি ইউনিয়নের বেশকিছু পরিবার পানিবন্দি রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, দুপুরের জোয়ারে স্বাভাবিকের থেকে দেড়ফুটের বেশি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে বাঁধ রয়েছে সেগুলো এখনও ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। তবে বাঁধ না থাকা কিছু এলাকায় পানি ওঠার খবর পেয়েছি।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, পানিতে যাতে কারও কোনো অসুবিধা না হয় এজন্য খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
শেখ আবু তালেব/এমএএস