‘ঘরটা পেয়ে ধন্য হয়েছি, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ’

রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘরে স্বামী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতেন জেসমিন বেগম। কখনো বৃষ্টিতে ভিজতেন আবার কখনো রোদে শুকাতেন। মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য আল্লাহর কাছে কত কান্না করেছেন তার হিসেব নেই জেসমিন বেগমের। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হলো তার। ঠাঁই মিলেছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে।
শুধু জেসমিন বেগম নয়, নোয়াখালী জেলাজুড়ে ঠাঁই মিলেছে ৩ হাজার ৫৭২ জন গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের। এতে করে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হয়েছে নোয়াখালী সদর, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল ও সেনবাগ উপজেলা।
বেগমগঞ্জ উপজেলার আমানুল্লাহপুর ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন ভ্যানচালক আবদুর রহিম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে রাস্তার পাশে থাকতাম। ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতাম। থাকার জন্য কোনো ঘর ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের একটা ঘর দিয়েছেন। এই ঘরে থেকে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সাহিনা খাতুন নামে আরেক ভূমিহীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী বোবা। অন্যের আশ্রয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতাম। অনেক কষ্ট হয়েছে। ঠিকমতো খাইতে পারি নাই। ঘুমাইতে পারি নাই। এখন মুজিববর্ষের ঘরে থেকে ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করাবো। ঘরটা পেয়ে আমি ধন্য হয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আশ্রয়ণের ঘর পেয়ে খুশি মো. সুমন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে আমরা বাস্তুহারা ছিলাম। রাস্তার পাশে থাকতাম। থাকার কোনো ঘর না থাকায় আমাদের অনেক মানুষ অনেক কথা বলতো। সরকার আমাদের স্থায়ী একটা ঘর দিসে, জমি দিসে। এখন আমি মা ও পরিবার নিয়ে খুব সুখে আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক ধন্যবাদ।

বেবি বেগম নামে আরেক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাঙা ঘরে অনেক কষ্ট করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটা ঘর দিসে। সেখানে রান্নাঘর, টয়লেট ও থাকার ঘর আছে। প্রধানমন্ত্রীকে আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখুক। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সালাম জানাই।
বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়াসির আরাফাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘর পেয়ে মানুষ যখন হাসে, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। আগামী ৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বেগমগঞ্জের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীদের মাঝে ঘর হস্তান্তর করবেন। এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের খবর। আশ্রয়ণের বাসিন্দারা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে উদগ্রীব হয়ে আছেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ঘরে থাকতে পেরে আনন্দিত।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোয়াখালী জেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভালো। প্রতিটি ঘর তৈরির সময় আমি নিজেসহ অন্য কর্মকর্তারা তদারকি করেছি। আমরা চেষ্টা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো সর্বোচ্চ ভালোভাবে নির্মাণ করার। প্রতিটি ঘরের ভেতর রয়েছে রান্নাঘর ও শৌচাগার। এসব ঘরের চারদিকে অনেকে সবজি বাগানসহ গাছগাছালি লাগিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ছিল একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। সে লক্ষ্যে সারাদেশে প্রত্যেক গৃহহীনকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ঘর করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন তার অংশ হিসেবে আমরা বেগমগঞ্জে ২৫৪টি ঘর তৈরি করেছি। এছাড়াও নোয়াখালী জেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজারের অধিক ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এই মানুষগুলোর এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলেছে। এসব মানুষ রাস্তার পাশে, মানুষের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করতেন।
তিনি আরও বলেন, বেগমগঞ্জের এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি কথা বলবেন। আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘিরে আমরা এখানে স্কুল করে দেব, মক্তব করে দেব। সব থেকে স্পেশাল যে বিষয়টি এই ৫০টি ঘরের জন্য জমি ক্রয়ের টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা বেদে সম্প্রদায়, ভিক্ষুককেও এই আশ্রয়ণের ঘর উপহার দিয়েছি। তারা সবাই নিজেদের ঘরগুলো আপন মনে সাজিয়েছেন। আমরা চাই প্রত্যেক ভূমিহীন মানুষ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন অনুযায়ী যেন একটা নিরাপদ আবাস্থল পায়, সেই লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মো. মামুনুর রশীদ কিরণ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের যাতায়াতের রাস্তাঘাটসহ জীবন মান উন্নয়নে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। সরকারের যে সুপেয় পানির প্রকল্প সেটি নেওয়া হয়েছে। যাতে তাদের ভবিষ্যতে কোনো অসুবিধা না হয়। পাশে স্কুল, মাদরাসা ও মসজিদ রয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তিগত এবং সরকারিভাবে তাদের পুনর্বাসনে নানা উদ্যোগ হাতে রয়েছে। এতে বাসিন্দাদের অবস্থার অনেক পরিবর্তন হবে। স্বপ্ন পূরণ হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর। যার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হাসিব আল আমিন/আরএআর