সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে চলছে আ.লীগ নেতা ও তার ছেলের মাছ চাষ

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর ইউনিয়নের ৬টি সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম আকন ও তার ছেলে নাহিদ আকন। এতে পানি নিষ্কাশনসহ নানা কারণে বিপাকে পড়েছেন ওই ইউনিয়নের কৃষকসহ হাজারো মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মহিপুর ইউনিয়নে আন্ধারমানিক নদী ও শিববাড়িয়া নদীর সঙ্গে স্লুইস গেটের মাধ্যমে সংযুক্ত মূলাম খালের শাখা খালের পানির ওপর নির্ভর করে চলে এ এলাকার কৃষকদের চাষাবাদ। তবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম আকন ও তার ছেলে শ্রমিকলীগ নেতা নাহিদ আকন এই সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। এছাড়া বাঁধের উপর নির্মাণ করেছেন মাছ পাহারাদারের ঘর। এতে স্থানীয় কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে। পানি নিষ্কাশন করতে না পারায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা হওয়ায় এরই মধ্যে পানিতে কৃষকের লাখ লাখ টাকার রবি শস্যেরও ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে ধান আবাদেও বেগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে প্রতিকার চেয়ে বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন মহিপুর ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মো. আব্দুল মন্নান।
অভিযোগে বলা হয়, নাহিদ আকন স্থানীয়ভাবে চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তার নামে রয়েছে হত্যাসহ একাধিক মামলা এবং অত্র এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের নেতা এবং সাধারণ মানুষ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে থাকে। আর এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে নাহিদ আকন নিজেই স্থানীয়দের মারধর করে থাকেন।
লতিফপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম দুয়ারী বলেন, তাদের জোর আছে, ক্ষমতা আছে তারা মাটি দিয়া আটকাইয়া খাল খায়। আমরা তো আর কিছু কইতে পারি না।
স্থানীয় বাসিন্দা কালাম বলেন, খালে বাঁধ দিয়ে তারা মাছ চাষ করে, আমাদের স্থানীয়দের কিছুটা সমস্যা হয়। তারা মাছ চাষ করে তারা খায় আমাদের কোনো ভাগ দেয় না। আর এই মাছ চাষ তারা অনেক বছর আগে থেকেই করে।
এ ব্যাপারে মহিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আব্দুল মালেক আকন বলেন, বহুবার চেষ্টা করেছি এই খালগুলো উন্মুক্ত করার কিন্তু পারিনি। গ্রামবাসী অসহায় তাদের কাছে। সরকারের কাছে অনুরোধ করব, স্থানীয়দের সুবিধার্থে হলেও খালগুলো উন্মুক্ত করার।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুস সালাম আকন বলেন, আমি শুধু লতিফপুর ওয়াকফের একটি খালে মাছ চাষ করি। আমি এটা কিছু অংশ ডাকে নিছি।
নাহিদ আকন বলেন, আজকে সকাল বেলা আমি সকল খাল উন্মুক্ত করে দিয়েছি, এখন যে খাল রয়েছে তা আমাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তি। আমাদের বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করেছে এটা মিথ্যা।
এ বিষয়ে মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সরকারি কোনো খালে ব্যক্তিগতভাবে মাছ চাষ করার কোনো সুযোগ নেই। খালের দুই পারের যে পরিবার থাকে তারা এই খালের সুফল ভোগ করবে।
কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও কৌশিক আহম্মেদ বলেন, খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কোনো সুযোগ নেই, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাহমুদ হাসান রায়হান/আরকে