রাজবাড়ী আ.লীগের সেক্রেটারি কাজী ইরাদতের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ

রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী এবং তার পরিবারের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তার সব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজবাড়ীর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান এ আদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) বিজন কুমার বোস এই আদেশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আদালত ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা যায়, দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এবং দুদক ফরিদপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজ চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুসারে রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে থাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অপরাধ সংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার আবেদন দাখিল করেন।
অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা তার আবেদনে উল্লেখ করেন যে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কাজী ইরাদত আলী নিজের নামে এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ৫২ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৭ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার ৩০৬ টাকার স্থিতি, ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং গাড়ি ক্রয়ে ব্যয় করা ২ কোটি ২০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা- মোট ৬৫ কোটি ৬৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৩ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে নিজের দখলে রেখেছেন। তিনি জানান, দুদকের অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব হিসাব নগদায়ন ও স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করেছেন। তাই আদালতের অনুমোদন ছাড়া এই সম্পত্তি অন্যত্র হস্তান্তর বা বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় কাজী ইরাদত আলী ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে থাকা অপরাধসংশ্লিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার আবেদন করেন দুদকের পিপি অ্যাডভোকেট বিজন কুমার বোস এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ।
এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে- কাজী ইরাদত আলী, তার স্ত্রী রাবেয়া খাতুন, ছেলে কাজী রকিবুল হোসেন, ছেলের স্ত্রী আফসানা নাওমি তাকিনা, মেয়ে কাজী সিরাজুম মুনিরা ও জামাতা নুরুল ইসলামের নামে ৪৬টি ব্যাংক হিসাব, যেখানে ৭ কোটি ৪৫ লাখ ২১ হাজার ৫৯২ টাকার স্থিতি রয়েছে। কাজী ইরাদত আলীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান মিডল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পরিচালিত ৬টি হিসাবের বিপরীতে রয়েছে ২ কোটি ৮ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৫ টাকা, ৪টি ব্যবসায়িক ব্যাংক হিসাবে রয়েছে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ১৩৯ টাকা। তার ছেলে, ছেলের স্ত্রী, মেয়ে ও মেয়ের জামাতার নামে ৪টি সঞ্চয়পত্রে রয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন মডেলের ৭টি গাড়ি যার মূল্য ২ কোটি ২০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা এবং গোল্ডেশিয়া জুট মিলের জমিসহ ৪৭টি দলিলে ৫২ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৭ টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. বিজন কুমার বোস বলেন, দুদকের কর্মকর্তারা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলীসহ তার স্ত্রী, ছেলে, ছেলের স্ত্রী, মেয়ে ও জামাতাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান করেন। অনুসন্ধান শেষে তদন্ত কর্মকর্তা এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন। সেই আবেদন আমলে নিয়ে রাজবাড়ী স্পেশাল জজ কোর্টের বিচারক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান কাজী ইরাদত আলীর স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযুক্ত কাজী ইরাদত আলীর মতামত জানতে তার মোবাইলে ফোন করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এআরবি