বাগেরহাটে ৭ হাজার পরিবার পানিবন্দি

বাগেরহাটে টানা সাত দিনের ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে পুরো জেলায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। অতি বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন খেটে-খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা। জলাবদ্ধতার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৭ হাজার ৫১০টি পরিবার। এছাড়াও ১ হাজার ৫৮০টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের মিঠাপুকুরপাড়, খানজাহান আলী সড়ক, শালতলার মোড়, সাধনার মোড়, রাহাতের মোড়, মাছবাজার, কাঁচাবাজার, চালপট্টী, পুরাতন বাজার মোড়, বাসাবাটি, সাহাপাড়া, খানজাহান পল্লি, গোবরদিয়া ও ভূমি অফিস মোড়সহ বাগেরহাট পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেশকিছু সড়কে হাঁটু সমান পানি ছিল।
শহরের রিকশা চালক আল আমিন হোসেন বলেন, সাত দিন যাবৎ টানা বৃষ্টিতে খুব অসহায় ভাবে দিন কাটছে। আজ রিকশা নিয়ে বেড়িয়েছি। লোকজন তেমন নেই।

তরুণ উদ্যোক্তা পিনাক ব্যানার্জী বলেন, আমি নতুন করে মাছ চাষ করি শুরু কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে আমার পুকুরের দুই পাড় ভেঙ্গে প্রায় অর্ধ লাখ টাকার মাছ বেরিয়ে গেছে। ঘর বাড়িতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
শুধু বাগেরহাট পৌরসভা নয়, টানা বৃষ্টিতে মোংলা ও মোরেলগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক, বাজার এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার মানুষ। মোংলা পৌরসভার মুসলিম পাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাহমুদ হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটু পানি জমে গেছে। ড্রেনগুলো থেকে পানি সরছে না। আমরা কয়েকজন লাঠি নিয়ে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে পানি সরানোর চেষ্টা করছি।
মোরেলগঞ্জ পৌর এলাকার আমজেদ হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানি সহজে না নামায়, মোরেলগঞ্জ বাজার, বারুইখালী, উপজেলা পরিষদ চত্বর, কুঠিবাড়ি, এসিলাহা স্কুল, এসএম কলেজ, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, সেতারা আব্বাস টেকনিক্যাল কলেজ, আজিজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ পৌরসভার বেশিরভাগ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। অনেকের পুকুরের মাছ বের হয়ে গেছে। পানিবন্দি রয়েছে অনেক পরিবার। পৌর এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভাল থাকলে বৃষ্টির পানি এত বেশি জমতে পারত না বলে জানান তিনি।
এদিকে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে রামপাল, মোংলা, মোরেলগঞ্জ ও কচুয়ার বেশকিছু এলাকায় মৎস্যঘের ডুবে মাছ বের হয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মৎস্য চাষীরা নেট ও পাটা দিয়ে মাছ রক্ষার চেষ্টা করছেন। বৃষ্টি দু-একদিন স্থায়ী হলে এসব এলাকার বেশিরভাগ ঘের ডুবে যাবে বলে দাবি মাছ চাষীদের।

তবে এই বৃষ্টিতে মাঠে থাকা সবজি ও ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং আমন ধানে বীজতলা ও সবজি ক্ষেতের উপকারই হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ঘেরের পারে থাকা সবজির ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাব কেটে যাওয়ায় নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। ফলে নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে না। তবে বৃষ্টির পানি সাধারণ মানুষকে বেশ ভোগাচ্ছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন বলেন, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ভারি বৃষ্টিতে জেলার ৭ হাজার ৫১০টি পরিবার জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছেন। ১ হাজার ৫৮০টি মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও অসহায় মানুষদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
শেখ আবু তালেব/এএএ