অসুস্থ হাফিজাকে চিকিৎসা করিয়ে পরিবারের হাতে তুলে দিলেন ডিসি

৮ মাস আগে নাটোর সদর উপজেলার হালসা ইউনিয়নের গোকুলনগর গ্রাম থেকে নিখোঁজ হন হাফিজা বেগম (৫১)। পরিবারের অজান্তে চলে আসেন ঠাকুরগাঁওয়ে। কোথাও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে তার ঠাঁই হয় সদর উপজেলার খোচাবাড়ি এলাকার একটি পরিত্যক্ত স্কুল ভবনের কক্ষে। দীর্ঘদিন যাবৎ সেখানে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে থাকেন হাফিজা। এক সময় তার শরীরে বাসা বাঁধে বিভিন্ন রোগ। একপর্যায়ে সারা দেহে রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
আক্রান্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে ছোট-বড় পোকা আর রক্ত। তীব্র যন্ত্রণায় কাতর হাফিজা মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। হাফিজার এমন অবস্থার খবর পেয়ে সাহায্যের হাত বাড়ান ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহবুবুর রহমান। নিজ কার্যালয়ের গাড়িতে করে সালেহাকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসা শুরু হয় হাফিজার। ধীরে ধীরে ক্ষত শুকিয়ে সুস্থ্য হয়ে ওঠেন হাফিজার। তবে কার হাতে তুলে দেওয়া হবে হাফিজাকে এমন আলোচনা যখন সর্বত্র, ঠিক তখনি প্রযুক্তির কল্যাণে সন্ধান মেলে হাফিজার পরিবারের
সোমবার (৭ আগস্ট) নাটোর থেকে হাফিজার স্বামী শফিকুল ইসলাম ও ছেলে শামিম হোসেন এসে হাফিজাকে শনাক্ত করেন।
হাফিজার ছেলে শামিম হোসেন বলেন, আমার মা মানসিক ভারসাম্যহীন একজন মানুষ। তার মাথায় আগে থেকেই সমস্যা ছিল। তিনি এর আগে কয়েকবার হারিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু আমরা পরবর্তীতে খুঁজে পেয়েছি। এবার এই প্রথম এত দূরে হারিয়ে গেছেন। ৮ মাস আগে হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কয়েক দিন আগে আমরা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জানতে পারি যে আমার মা ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছেন। অবশেষে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে তিনি ঠাকুরগাঁ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হাফিজার স্বামী শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা আজকে অনেক খুশি হয়েছি। আমার স্ত্রীকে হারিয়ে যাওয়ার পর আমরা অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছি। অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও আমরা পাইনি। অবশেষে থানায় গিয়ে জিডি করি। কয়েক দিন আগে জানতে পারি আমার স্ত্রী ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ পাই যে সদর উপজেলার খোচাবাড়ির পাশে একটু স্কুলে অজ্ঞাত পরিচয় এক নারী স্কুল কক্ষে অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের গাড়িতে নিয়ে হাফিজাকে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করাই। চিকিৎসা শুরু হয় হাফিজার, ধীরে ধীরে ক্ষত শুকিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন হাফিজা।হাফিজা তার বাসার ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। তখন আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে হাফিজার পরিবারের সন্ধান পাই। আজকে হাফিজাকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, যেহেতু এখানে তার কেউ ছিল না, তাই আমরা তার চিকিৎসা খুব ভালোভাবে করেছি। পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে। ইতোমধ্যে আমরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগাযোগ করে দিয়েছি। বাকি চিকিৎসা সেখানে সরকারি খরচে করা হবে।
আরএআর