ফেনীতে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ সংস্কার করলেও কমেনি দুর্ভোগ

২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৬৭ স্থানে ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বাঁধ সংস্কারে গত ছয় বছরে ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তবুও ভাঙন রোধ করা যায়নি।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, জলের টাকা জলেই গেছে। এতে বাঁধ ভাঙন রোধ হয়নি, তাদের দুর্দশাও কাটেনি। বরং বর্ষা মৌসুমে আসলেই বাঁধে ভাঙনের দেখা দেয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বাঁধ সংস্কারে প্রায় ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও বাঁধের সাতটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। পরের বছর ২০১৯ সালের বন্যায় ২২ জায়গায় বাঁধ ভেঙে যায়। সে সময় বাঁধ সংস্কারে প্রায় ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়। ২০২০ সালের জুলাই মাসে বাঁধের ১৫টি স্থান ভেঙে যায়। এতে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধের ৭০০ মিটার মেরামত করা হয়। ২০২১ সালের বাঁধের নয়টি স্থানে ভাঙন মেরামতের জন্য ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালের ছয় স্থানে ভাঙা বাঁধ মেরামতের জন্য ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যে বাঁধের তিনটি স্থানে ভাঙন দেখা গেছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবারই বাঁধ সংস্কারের কাজ পেয়েছে নির্দিষ্ট কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের মধ্যে রয়েছে, মেসার্স ফেনী ইউনাইটেড কনস্ট্রাকশন, মেসার্স কাশেম ট্রেডার্স, মেসার্স ইমেজ এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স শাহ সুফি এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম রাজু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বন্যা থেকে রক্ষা পেতে বাঁধ নির্মাণ করলেও তা স্থানীয়দের কোনো কাজে আসছে না। ভাঙন কবলিত স্থানসহ নতুন নতুন জায়গায় প্রতি বছরই বাঁধ ভাঙে। প্রতিবছর এসব ভাঙন মেরামতের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বছর ঘুরে সে টাকা পানিতে ভেসে যায়। স্থায়ী সমাধান না করে প্রতিবছর নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় মানুষের।
ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, একই জায়গায় বারবার ভাঙে। এর জন্য বরাদ্দও দেওয়া হয়। আবার একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। বন্যা হলে কিছু অসাধু কর্মকর্তার কপাল খুলে যায়। পাউবো কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় খামখেয়ালিভাবে ঠিকাদার যেনতেন ভাবে মেরামতের কাজ করেন। এ কারণেই একই জায়গা বারবার ভাঙছে।
আরেক বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম মজুমদার বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণের পর থেকে আশীর্বাদ নয়, প্রতি বছরই এই বাঁধের একাধিক স্থানে ভেঙে অভিশাপই বয়ে আনছে স্থানীয়দের জন্যে। এর একটি স্থায়ী সমাধান করা হোক।

এদিকে এখনও ফেনীর উত্তরাঞ্চলের উপজেলা ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ফুলগাজীর কিছু গ্রাম থেকে পানি নামলেও পরশুরামে এখনও নদীর পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। ফেনী-বিলোনিয়া সড়ক পানিতে ডুবে থাকায় দুইদিন ধরে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। গত চার দিনের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ সড়ক, মৎস্য ও কৃষি খাত। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। পানি না কমলে পূর্ণাঙ্গ ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে না বলছে কৃষি বিভাগ। গত সোমবার শুরু হওয়া এ বন্যায় দুই উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে জানান, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার অন্তত ৮২৫ হেক্টর আমনের জমি পানির নিচে তলিয়ে আছে। এছাড়া ১০ হেক্টর আমন বীজতলা ও ১৫ হেক্টর সবজি খেত পানিতে নিমজ্জিত। দ্রুত পানি না নামলে এসব ফসলের ক্ষতি হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, বন্যার পানিতে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৩৭৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য চাষীদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পেলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তা প্রদান করা হবে বলে জানান তিনি।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভুঁইয়া ও পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা শমসাদ বেগম জানান, বানভাসি মানুষদের জন্য শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বন্যার পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে।
তারেক চৌধুরী/এএএ