সোনালী ব্যাংকে জমা রাখা টাকা ফেরত পেতে দুই গ্রাহকের আকুতি

সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখায় জমা রাখা টাকা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন শেখ মো. জালাল উদ্দিন ও টিপু শেখ নামে দুই গ্রাহক। সোমবার (২১ আগস্ট) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে টাকা ফেরত পাওয়ার আকুতি জানান এই দুই গ্রাহক।
টাকা দাবি করা শেখ মো. জালাল উদ্দিন বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া এলাকার মৃত ওসমান গনি শেখের ছেলে। টিপু শেখ বাগেরহাট শহরের রেলরোড এলাকার মৃত মজিদ শেখের ছেলে।
শেখ মো. জালাল উদ্দিন বলেন, সেনাবাহিনীর একজন কর্মচারী হিসেবে ২০১১ সালে আমি অবসরে যাই। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখায় মাসে ৫ হাজার টাকা লভ্যাংশ পাওয়ার শর্তে ৫ লাখ টাকা ৫ বছরের জন্য জমা রাখি। জরুরি প্রয়োজনে ২০১৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এককালীন চার লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট ৩ লাখ টাকা এবং ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬০১ টাকা সর্বমোট ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬০১ টাকা দিয়ে সুদসহ সমুদয় ঋণ পরিশোধ করি। ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর আমার হিসেবের ৫ বছর পূর্ণ হলে টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে যাই। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যাংকে চুরির ঘটনা ঘটেছে, দুদকে মামলা চলছে, নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত টাকা দেওয়া যাবে না। পরে টাকার জন্য দুদকসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকি।
সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি চিঠিতে জানায়, ২০১৩ সালে এবং ২০১৫ সালে ৪ লাখ টাকা করে পৃথক দুটি ঋণ নিয়েছি আমি। দুটি ঋণের বিপরীতে ব্যাংক আমার কাছে ১২ লাখ ৪৯ হাজার ১৯৩ টাকা দাবি করে। মূলত এটা খুবই হাস্যকর, কারণ ব্যাংকে আমার জমা মাত্র ৫ লাখ টাকা, সেখানে ব্যাংক কেন আমাকে ৮ লাখ টাকা ঋণ দেবে। আমি ২০১৩ সালে যে ঋণ নিয়েছি, তা সুদসহ পরিশোধ করেছি। ব্যাংক আমার কাছে কোনো টাকা পায় না, বরং আমার ৫ লাখ টাকা ৬ বছর ধরে ব্যাংকে পরে আছে। আমি সুদসহ পুরো টাকা ফেরত চাই।
২০১২ সালে মাসে ৫ হাজার টাকা জমা দেওয়ার শর্তে সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখায় ১০ বছর মেয়াদি একটি ডিপোজিট (এমডিএস) করেছিলেন টিপু শেখ। জরুরি প্রয়োজনে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ডিপোজিটের বিপরীতে এক লাখ টাকা ঋণ গৃহণ করেন তিনি। পাঁচটি ধাপে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৭ টাকা দিয়ে সুদসহ সমুদয় ঋণ পরিশোধ করেন টিপু। ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর এমডিএসের মেয়াদপূর্ণ হওয়ায় সুদসহ মূল টাকা পাওয়ার আবেদন করেন তিনি। এক মাস পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আপনি ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার একটি ঋণ নিয়েছেন। যা পরিশোধ করেননি। এই ঋণ সুদসহ পরিশোধ করলে আপনার জমানো টাকা পাবেন। ২০২৩ সালের ১৪ মে ব্যাংক থেকে টিপু শেখকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার ঋণ ২০১৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুদসহ ১ লাখ ৬৭ হাজার ৭২৭ টাকা হয়েছে। এর সঙ্গে আরও ছয় বছরের সুদ যোগ করে তাকে ফেরত দিতে হবে।
আক্ষেপ করে টিপু শেখ বলেন, ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকে আমার জমা ছিল মাত্র ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। সেখানে ব্যাংক কীভাবে দুটি ঋণ অনুকূলে আমাকে দুই লাখ ৩৫ টাকা ঋণ দেয়। আসলে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ঋণের কথা বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া। আমি ওই ঋণ গ্রহণ করিনি। আমি যেকোনো মূল্যে আমার সকল টাকা ফেরত চাই। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সুকুমার রায় বলেন, টিপু শেখ যে ঋণকে অস্বীকার করছেন, সেই ঋণের আবেদনে তার স্বাক্ষর হুবহু মিলে গেছে। এ কারণে ঋণের টাকা পরিশোধ করে তার জমানো টাকা ফেরত নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া কিছু জালিয়াতির ঘটনা ব্যাংকে ঘটেছিল, তা নিয়ে দুদকে মামলা চলমান রয়েছে। মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ করা হচ্ছে। দুদক এবং আদালত থেকে সিদ্ধান্ত আসলে সমাধান হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২ আগস্ট থেকে ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখায় প্রায় ৫ কোটি টাকার দুর্নীতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ব্যাংকের বাগেরহাট শাখা ব্যবস্থাপক খান বাবলুর রহমান ও দুদক পৃথক দুটি মামলা করে। দুটি মামলায় একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে ছিলেন। মাহফুজুর রহমান বাবু নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা কিছু টাকা ব্যাংককে ফেরতও দিয়েছেন। মামলা দুটি চলমান রয়েছে।
শেখ আবু তালেব/আরএআর