এই মসজিদে কাঠের খড়ম ব্যবহার করেন মুসল্লিরা

বাংলায় যখন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে তখন সচ্ছল পরিবারের লোকেরা কাঠের খড়ম ব্যবহার শুরু করেন। আশির দশকে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দূর থেকেই মানুষ বুঝতে পারতো কেউ একজন আসছে। তাছাড়া বাড়িতে কুটুম এলেও খড়ম ও পানির ঘটি এগিয়ে দিয়ে তাকে স্বাগত জানানোরও প্রচলন ছিল। বর্তমানে প্লাস্টিক, বার্মিজ ও চাইনিজ জুতার প্রচলনে সেই দৃশ্য এখন হারিয়ে গেছে।
তবে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী কারমাইকেল কলেজের কেন্দ্রীয় মসজিদে এখনো খড়মের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। মসজিদের অজুখানার পাশে কয়েক জোড়া খড়ম রেখে দেওয়া আছে। নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা অজুখানায় এ খড়ম ব্যবহার করে থাকেন।
শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় অজুখানায় গেলে দৃষ্টি যায় কাঠের খড়মের দিকে। দেখা যায় একদল মুসল্লি কাঠের খড়ম পায়ে দিয়ে খট খট শব্দ করে অজু করতে এগিয়ে যাচ্ছেন। তারা যখন ফিরে আসছে তখন নতুন কিছু লোক আবার খড়ম পায়ে দিচ্ছেন।
কারমাইকেল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবু রায়হান জানায়, কলেজের মসজিদে প্রথম খড়ম দেখেছি। প্রথম যেদিন দেখি সেদিন অনেক্ষণ পায়ে দিয়ে হাঁটাহাঁটি করেছি। এরপর নামাজ পড়তে গেলে প্রায় দিনেই খড়ম পায়ে দেই। বাড়িতে দাদার কাছে শুনছিলাম তাদের সময় মানুষ খড়ম বা কাঠের জুতা ব্যবহার করতো। এ মসজিদে স্বচক্ষে দেখেছি ও পরেছি।
ইসলামের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আক্কাস আলী বলেন, খড়ম পায়ে দিলে শক্ত শক্ত লাগে। তবে পরতে ভালোই লাগে। হাঁটতে শুরু করলে কাঠ মাটির সাথে লেগে খট খট আওয়াজ হয়। এগুলো প্রচলিত জুতার থেকে আলাদা।
কলেজ পাড়ার বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, এই মসজিদের একটি ব্যতিক্রম আয়োজন হলো খড়মের ব্যবহার। এ শহরের আর কোথাও এরকম দেখা যায় না। এ খড়ম মানুষের অতীতকে মনে করে দেয়।
মসজিদের ঈমাম খাইরুল বাশার জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে এ মসজিদের অজুখানায় খড়মের ব্যবহার শুরু হয়। তার আগে বিভিন্ন চটি জুতার ব্যবহার করা হতো। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে তা হারিয়ে যেত। এরপর খড়মের জুতা ব্যবহার করা শুরু হয়। এখন মানুষ এ জুতা ব্যবহার করছে। খড়ম নষ্ট হলে আবার নতুন নিয়ে আসা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৮ সালে কারমাইকেল কলেজ জামে মসজিদটি স্থাপিত হয়। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও আশপাশের এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা এ মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন।
শিপন তালুকদার/আরকে