শতবর্ষী এই হাটে প্রতিদিন বিক্রি হয় ৭ হাজার লিটার দুধ

যুগ যুগ ধরে দুধের হাট বসে বাগেরহাটের সদর উপজেলার চুলকাঠী বাজারে। প্রতিদিন এই হাটে সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার লিটার দুধ বিক্রি হয়।
খুলনা-মোংলা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই হাটে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। বাগেরহাট জেলা ছাড়াও খুলনা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মিষ্টি ব্যবসায়ী, পাইকাররাসহ স্থানীয়রা প্রতিদিন ছয় থেকে সাত হাজার লিটার দুধ কেনেন এখান থেকে।
বাজার সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার লিটার দুধ বিক্রি হয় এ হাটে। স্থানীয় হাকিমপুর, রণবিজয়পুর, ভরসাপুর, চুলকাঠি, খানপুর, সোনাতুনিয়া গ্রামের দুই শতাধিক দুগ্ধ খামারি এই হাটে দুধ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। খামারে উৎপাদিত এসব দুধ এখান থেকে চলে যায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়। কেউ দুধ কিনছেন মিষ্টির দোকানের জন্য আবার কেউ বাড়িতে খাওয়ার জন্যও দুধ কেনেন এখান থেকে। ভেজালমুক্ত ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা এখানে দুধ কিনতে আসেন।
সরেজমিনে চুলকঠি খুলনা মংলা মহাসড়কের পাশে বসা দুধের হাটে দেখা যায়, কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ ভ্যানে, কেউ আবার গাড়িতে নানা ধরনের পাত্রে দুধ নিয়ে এসেছেন। পাইকারদের ছাড়াও স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েক ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে যায় খামারিদের আনা দুধ।
তবে ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের ফলে দিন দিন হাটে কমেছে ক্রেতার সংখ্যা। খাজনা দেওয়ার ফলে বিক্রেতারাও পাচ্ছে না আশানুরূপ মুনাফা।

ক্রেতারা বলছেন, স্বল্প দামে ভেজাল মুক্ত দুধ কিনতে দূর -দূরান্ত থেকে ছুটে আসি এই ঐতিহ্যবাহী হাটে। তবে বর্তমানে হাটে দুধের যোগান কম হওয়ায় দুধের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা। যেখানেই আগে দুধের দাম ছিল লিটার প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা সেখানে দাম বেড়ে বর্তমানে লিটার প্রতি দুধের দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হয়েছে।
পারভিন নামের এক বিক্রেতা বলেন, রাস্তার পাশে হাট বসায় আমাদের জন্য সুবিধা। এখানে যারা ব্যাপারীরা রয়েছে তারা দুধের দাম অনেক কম বলে। রাস্তাতে চলাচল করা বিভিন্ন গাড়ি চালোকেরা আমাদের কাছে বেশি দামে দুধ কেনে।
দাম বেড়ে যাওয়ায় মিষ্টির দোকান ও হোটেল ব্যবসায়ীদের উপরে প্রভাব পড়েছে। ফলে কিছুটা বাধ্য হয়ে মিষ্টি এবং দুগ্ধ জাতীয় খাবারের দাম বাড়াতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নিরঞ্জন সরকার নামের ব্যক্তি বলেন, স্বাধীনতার পর আগে থেকে এই হাট দেখে আসছি। দূর-দূরান্ত থেকে এখানে লোকজন দুধ কিনতে আসেন। আমিও আগে এই হাটে দুধ বিক্রি করতাম। এখন বয়স হয়ে যাওয়ায় দুধ নিয়ে আসতে পারি না। কিন্তু হাটের প্রতি মায়ার কারণে প্রতিদিন ঘুরতে আসি।
হাকিমপুর গ্রামের দুধের হাট দেখতে আসা মিলন দাস বলেন, প্রায় ২০ বছর যাবৎ এখানে দুধের হাট দেখছি রাস্তার পাশে বসে যেকোনো সময় সড়ক দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে তাই সরকারের কাছে দাবী করব দুধের হাতটি যেন নিরাপদ একটি স্থানে হস্তান্তর করা হয়।
চুলকাঠি গ্রামের আঁকলমা বেগম বলেন, তিনটি গাভী থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি দুধ এই হাটে নিয়ে বিক্রি করি। বর্তমানে দাম কমের কারণে গরুর খাবার ও নিজেদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়।
রামপাল থেকে দুধ কিনতে আসা অসীম কুমার দাস বলেন, এই দুধের হাটে খাঁটি দুধ পাওয়া যায়। তাই এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এখান থেকে দুধ কিনি। আমাদের মিষ্টির দোকান আছে এই কারণে আমরা দুধ ৫০ থেকে ৫৫ লিটার কিনে নিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে খাজনা দেওয়ার জন্য দুধের দাম একটু বেশি দিতে হচ্ছে।
বাজার কমিটির সভাপতি মুরারী কৃষ্ণ বলেন, এই দুধের হাট শত বছরের পুরাতন। এই হাটে প্রতিদিন প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার লিটার দুধ বিক্রি হয়। আমার জন্মের পর থেকে দেখে আসছি হাটটি রাস্তার পাশে বসে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সরকার যেন আমাদের এই হাটের একটা নির্দিষ্ট জায়গা করে দেয়। যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতারা এসে নিজেদের সুবিধামতো বেচাকেনা করেন।
তিনি আরও বলেন, মহাসড়কের পাশ থেকে পার্শ্ববর্তী কোনো স্থানে হাটটি যদি স্থানান্তর করা হয়, তাহলে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই দুর্ঘটনা থেকে ঝুঁকিমুক্ত থাকবেন।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশেদুজ্জামান বলেন, দুধের হাট ঝুঁকিমুক্ত করতে সরেজমিনে বাজার কমিটির লোকজনের সঙ্গে কথা বলা হবে। তারা যেখানে উপযুক্ত মনে করেন সেখানে হাটটি স্থানান্তর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শেখ আবু তালেব/আরকে