নোয়াখালীর চেয়ারম্যান ঘাটে কম খরচে ইলিশ বিলাস

বড় তাওয়ায় গরম তেলে ভাজা হচ্ছে ইলিশ। তাওয়ার চারপাশে ভিড় করেছেন ইলিশ খেতে আসা বিভিন্ন জেলার মানুষ। সারারাত এভাবেই চলে ইলিশ উৎসব। নোয়াখালীর হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটে রুপালি ইলিশ খেতে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে অসংখ্য মানুষ যোগ দেন এই উৎসবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার প্রবেশপথ চেয়ারম্যান ঘাট ইলিশের মৌসুমে বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। দরদাম করে মাছ কিনছেন ক্রেতারা। ইলিশের দামও তুলনামূলক কম। সেই মাছ চাহিদা মোতাবেক ভেজে বা রান্না করে পরিবেশন করা হচ্ছে গরম ভাতের সঙ্গে। আবার কেউ কেউ মুড়ি দিয়ে খাচ্ছেন ইলিশ ভাজা। এছাড়া আছে গরম ভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছ, মাছের ডিম ভাজা, লেজ ভর্তা, বেগুনের চপ, স্থানীয় পান, দই, মিষ্টি ও চা।
স্থানীয়রা জানান, ইলিশের মৌসুমে চেয়ারম্যান ঘাটে মানুষের প্রতিদিনের ব্যবসা এটি। এখানে দিনের চেয়ে রাতে ব্যস্ততা বেশি থাকে। মেঘনা নদীতে হাতিয়ার জেলেদের ধরা এসব রুপালি ইলিশের চাহিদাও বেশি। এখানে স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান মিলে প্রায় ২০টি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে অস্থায়ী দোকান রয়েছে ১০টির মতো। অস্থায়ী দোকানগুলোতে গড়ে ১০ হাজার টাকার ইলিশ বিক্রি হয়। স্থায়ী দোকানে আরও কয়েক গুণ বেশি বিক্রি হয়। ফলে সব মিলে প্রতি রাতে বিক্রি হয় লাখ টাকা বা আরও বেশি। প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিক্রি বেশি হয় বলে জানান এখানকার বিক্রেতারা।
ফেনী থেকে আসা মো. আসিফ ইকবাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্ধুদের নিয়ে হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটে ঘুরতে এসেছি। ঘাট থেকে ইলিশ কিনে দোকানে ভাজতে দিয়েছি। তাজা ইলিশের সঙ্গে গরম ভাত আমাদের কাছে খুব ভালো লাগছে।

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে আসা ইয়াছিন আরাফাত ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেয়ারম্যান ঘাট এলাকায় মেঘনার দৃশ্য অসাধারণ। চারপাশে ঘুরে যাওয়ার সময় ইলিশ ভাজা খেতে অসাধারণ লেগেছে। আমরা বন্ধুরা মিলে এখানে এসেছি। বেগুনের চপ, পেঁয়াজ-মরিচ দিয়ে ইলিশ ভাজা খেতে অসাধারণ লাগে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের হাতিয়ার ইলিশের স্বাদ অনেক। অনেকে ইলিশ ভাজা, ইলিশ ভর্তা মুড়ি দিয়ে খায়। সাথে স্থানীয় মহিষের দই পাওয়া যায়। সেটাও ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে জনপ্রিয়। মিষ্টি তো আছেই। চাঁদপুরকে ইলিশের বাড়ি বলা হলেও হাতিয়ার মেঘনার ইলিশ বর্তমানে চাঁদপুরে বেশি বিক্রি হয়।
ভান্ডারি হোটেলের মালিক আলাউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ ইলিশ খেতে আসে। বেশিরভাগ সময় তারা রাতে আসেন। আমরা সারারাত ইলিশ ভাজা বিক্রি করি। আমাদের ফ্রিজে ইলিশ থাকে। ক্রেতারা পছন্দ অনুযায়ী ইলিশ কিনে দিলে আমরা ভেজে দেই। এটা আমাদের এই চেয়ারম্যান ঘাটের জন্য নতুন সম্ভাবনা।

বার আওলিয়া হোটেলের মালিক মো. বাহার উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাওয়া ঘাটে যেমন পর্যটকরা ইলিশ খেতে আসে আমরাও এখানে সেই ব্যবস্থা রেখেছি। ইলিশ ভাজা, বেগুন ভাজা, লেজের ভর্তা, ইলিশের ডিম ভাজা সব আমরা দেই। রাত ১২টার পর বেশি মানুষ আসে। একবার যারা খায় তারা বারবার আসে।
মেঘনা ফিশিং এজেন্সির ম্যানেজার মো. হাবিব ভূঁইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাতিয়ার সাবেক সাংসদ সদস্য ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী সাহেব এই চেয়ারম্যান ঘাটটি নিজ অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এখানে অনেকে ব্যবসা করে ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। এখান থেকে কেউ তাজা ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন আবার কেউ এখানেই ভেজে খাচ্ছেন। ভাজা ইলিশ খেতে খেতে মানুষ ফেসবুকে লাইভও করছেন। এভাবে হাতিয়ার সুনাম বাড়ছে। নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে জেলেদের জন্য সমুদ্রে কোনো অনিয়ম নেই। নির্বিঘ্নে সমুদ্রে সবাই মাছ ধরতে পারছে। চেয়ারম্যান ঘাটে আমার উদ্যোগে প্রায় ৮০-৯০ জন ব্যবসায়ী মাছের আড়ৎ দিয়েছে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ ইলিশ কিনতে ও ভাজা ইলিশ খেতে এই ঘাটে আসছে। পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের এখানে চেয়ারম্যান ঘাট পুলিশ ফাঁড়ি আছে। ইলিশ প্রেমীদের জন্য চেয়ারম্যান ঘাট সব সময় নিরাপদ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাতিয়ার মেঘনার ইলিশ চাঁদপুরে গিয়ে চাঁদপুরের ইলিশ নামে বিক্রি হয়। চেয়ারম্যান ঘাটের ইলিশ বিলাসের মাধ্যমে নতুন করে এই জেলার ব্র্যান্ডিং হবে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। ব্যবসায়ীরা মাওয়া ঘাটের মতো উদ্যোগ নিলে আমরা তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করব।
হাসিব আল আমিন/আরকে