নাটোরে গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

নাটোরের গুরুদাসপুরে সীমা খাতুন (২৮) নামের এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার মশিন্দা ইউপির শিকারপুর বাহাদুরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সীমা খাতুন উপজেলার রানীগ্রাম ফকিরপাড়া এলাকার মো. আছাদ আলীর মেয়ে এবং বাহাদুরপাড়ার মো. ইছর আলীর ছেলে মো. রতন ওরফে কালুর স্ত্রী। সীমা খাতুনের পাঁচ বছরের মেয়ে ও তিন বছরের এক ছেলে রয়েছে।
নিহত সীমা খাতুনের খালাতো ভাই সোহেল রানা অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, গুরুদাসপুরের এক মেয়ের সঙ্গে রতনের দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। ওই মেয়েসহ রতন স্থানীয়দের হাতে আটকও হয়। রতনের পরকীয়ার সম্পর্কের কথা আমার বোন জেনে যাওয়ায় তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে রতন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলছিল।
তিনি আরও বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে সীমাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম এবং মাথা ফাটিয়ে দেয় রতন। পরে রতনের পরিবারের লোকজন সীমাকে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে মাথায় সেলাই দিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। বিকেলে বাড়িতে আসার পর সীমা বমি করতে থাকলে রতন ও তার পরিবারের সদস্যরা স্থানীয়দের বলে সীমা বিষ খেয়েছে। সীমার অবস্থা খারাপ হলে আবার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে নিয়ে যেতে বলেন। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় বড়াইগ্রামের বনপাড়ায় সীমা মারা যান।
ঢাকা পোস্টকে সোহেল রানা বলেন, সীমার মরদেহ বাড়িতে আনার পর স্থানীয়দের রতনের পরিবার জানায়, বিষ খেয়ে মারা গেছে সীমা। এ সময় তারা একটি ডেথ সার্টিফিকেটও দেখায়। আমার বোনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখমের পর অবস্থা খারাপ হলে বিষ খাইয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে রতনের পরিবার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মুজাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে সীমা খাতুনকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে এলে প্রাথমিক চিকিৎসাসহ তার মাথায় সেলাই দেওয়া হয়। এক ঘণ্টা পর আবার হাসপাতালে নিয়ে এলে তার শরীরে বিষের উপস্থিতি পাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ট্রান্সফার করা হয়। রাজশাহী নেওয়ার পথে মারা যান সীমা খাতুন। নিহতের স্বজনের কোনো ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি, তাদের ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় রাতেই নিহতের ভাই রুবেল আহমেদ বাদী হয়ে থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন জানিয়ে গুরুদাসপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাদীর অভিযোগ পিটিয়ে জখমের পর অবস্থার অবনতি হলে সীমা খাতুনকে বিষ খাওয়ানো হয়। কিন্তু বিবাদীরা জানান, পিটিয়ে জখমের পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে এলে রাগ-অভিমানে বিষপান করেন সীমা খাতুন।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় রাতেই অভিযান চালিয়ে মামলার চার নম্বর আসামি মো. স্বপনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আর নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
এমজেইউ