টিনশেড ঘরে চলে পাঠদান, বৃষ্টি হলে পানি ঢুকে যায় শ্রেণিকক্ষে

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের ১০ বছরেও পাকা ভবন পায়নি। ৪টি টিনশেড ঘরে নানান প্রতিকূলতা সহ্য করে তাদের পাঠদান কর্মসূচি চলে। কখনো তপ্ত রোদে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আবার একটু বৃষ্টি হলেই শ্রেণিকক্ষে ঢুকে যায় পানি।
বিদ্যালয়ের পাশেই পানপাড়া-জামালপুর সড়ক, কিন্তু নেই নিরাপত্তা দেওয়াল। এতে শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঝুঁকিতে থাকেন শিক্ষক-অভিভাবকরা। বিদ্যালয়ের সভাপতিও অন্য উপজেলার বাসিন্দা।
এসব সমস্যায় জর্জরিত রামগঞ্জ উপজেলার লামচর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রোববার (১ অক্টোবর) দুপুরে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাইন উদ্দিন ও প্রধান শিক্ষক গৌরী রায় চৌধুরীসহ অভিভাবকেরা ঢাকা পোস্টকে জানান তাদের এসব ভোগান্তির কথা।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যালয়ের জমি ৩৫ শতাংশ। কিন্তু খতিয়ানভূক্ত মাত্র ১৫ শতাংশ। ১৯৭০ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়। তখন বিদ্যালয়ে একটি পাকা ভবন ছিল। ওই ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ায় শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নিলামের মাধ্যমে তা অপসারণ করা হয়। এরপর বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৪ কক্ষের টিনশেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। তখন একটি পাকা ভবন বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট দপ্তর। বিদ্যালয় থেকেও একাধিকবার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ ৩ বছর অতিবিাহিত হলেও এখন পর্যন্ত ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সবশেষ গত এপ্রিল মাসে একটি ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। এই বিদ্যালয় থেকে করোনাকালীন অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। আবার কিছু শিক্ষার্থী অন্যত্র চলে গেছে। এখন বিদ্যালয়টিতে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৭৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে ২৭ জন বালক ও ৪৯ জন বালিকা।

জানা গেছে, দক্ষিণ হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাইন উদ্দিন রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের বাসিন্দা। প্রতিদিন বাড়ি থেকে তিনি নিজ কর্মস্থল রামগঞ্জ উপজেলার লামচর ইউনিয়নের পানপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। তিনি বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক। তবে তার বাড়ি থেকে কর্মস্থল যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। আর কর্মস্থল থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরত্বে দক্ষিণ হাজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
নুসরাত জাহান ও মায়েশা আক্তার আয়েশাসহ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, টিনের ঘরে গরমে ক্লাস করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। আমাদের একটি খেলার মাঠ নেই। বৃষ্টিতে শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়ে। অন্যান্য বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি।
অভিভাবক নুরল আমিন ও দেলোয়ার হোসেন জানায়, প্রায় ৩ বছর আগে পাকাভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকে টিনশেড ঘরটিতে কার্যক্রম চলছে। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অসহনীয় কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। একটি পাকা ভবন দেবে বলে, এখনো দেয়নি। এখানকার শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দ্রুত বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন প্রয়োজন।
সহকারী শিক্ষক প্রীতু সাহা এ্যানি ও মো. ইসমাইল বলেন, টিনসেড ঘর হওয়ায় প্রচণ্ড গরম সহ্য করতে হয়। এখানে লোডশেডিংও বেশি হয়। বৃষ্টি হলে পানি ঢুকে মেঝে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে পড়ে। শ্রেণিকক্ষে নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি হয়। অনেক কষ্ট পোহাতে হয় সবাইকে। এতে প্রতি বছরই শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে বিদ্যালয় থেকে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌরী রায় চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচালনা জন্য অন্তত ৬টি কক্ষ প্রয়োজন। কিন্তু টিনশেড ঘরটিতে ৪টি কক্ষ রয়েছে। এরমধ্যে একটি অফিস ও ৩টি শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে দুই শিফটে ভাগ করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কর্মসূচি পালন করতে হয়। আমাদের একটি পাকা ভবন খুবই প্রয়োজন। একটি পাকা ভবন হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব হবে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বাড়বে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাইন উদ্দিন মোবাইল ফোনে বলেন, প্রায় একবছর হল বোর্ড কর্তৃক আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমার বাড়ি রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নে। এজন্য সবসময় বিদ্যালয়ে আমার যাওয়া সম্ভব হয় না। বিদ্যালয়টি অনেক সমস্যায় জর্জরিত। একাধিকবার একটি ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো ভবন দেওয়া হয়নি। শুনেছি জমির মালিকানা নিয়ে সমস্যা রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল লতিফ মজুমদার বলেন, আমি নতুন। ঘটনাটি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে বিদ্যালয়ের নাম তালিকাভুক্ত করে ভবনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরকে