ক্লিনারের হাতে নারীর অস্ত্রোপচার, ক্লিনিক সিলগালা

ফরিদপুরে একটি ক্লিনিকের কর্মচারীর (ক্লিনার) বিরুদ্ধে এক ক্যান্সার রোগীর অস্ত্রোপচারের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে হাসপাতালটি সিলগালা করেছে জেলা প্রশাসন।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ‘সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতাল’ নামের ক্লিনিকটিতে পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুন নাহার। ক্লিনিকটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান গেটের পশ্চিম পাশে শহরের খাবাসপুর মহল্লায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ধারে অবস্থিত।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিন্টু বিশ্বাস বলেন, ক্লিনার নেয়ামতকে দিয়ে অস্ত্রোপচার, অপারেশন থিয়েটারের ফ্রিজ বন্ধ থাকা এবং ভেতরে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়ায় ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় নিয়মিত মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জানা যায়, এ ক্লিনিকে গত ১৮ নভেম্বর চিকিৎসক দেখাতে যান জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের খাসকান্দি গ্রামের বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী সরোয়ার আলমের স্ত্রী ববিতা বেগম (২৮)। স্তনের অসুস্থতা নিয়ে তিনি চিকিৎসক আতিকুর আহসানকে দেখাতে যান। চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে বায়োপসি পরীক্ষার কথা বলেন।
চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হওয়ার পর হাসপাতালের ওটি কক্ষের দায়িত্বে থাকা ক্লিনার নিয়ামুল শেখ (নিয়োগপত্র অনুযায়ী) তাকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে হাসপাতালে যেতে নিষেধ করেন এবং নিজেই ওই ক্লিনিকে স্তনের টিস্যু সংক্রামক পরীক্ষার (বায়োপসি) জন্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহ করেন।
আতিকুর আহসান ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ইউনিট প্রধান। তিনি বলেন, ওই নারীকে অপচিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। যে ব্যাক্তি এই কাজটি করেছেন তিনি এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ নয়। এ যে ব্যাপারটি ঘটেছে তা পুরোটাই একটি অপচিকিৎসা ও ভুল চিকিৎসার কারণে হয়েছে। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমি জানতে পেরেছি।
ভুক্তভোগী ববিতা বেগম বলেন, অস্ত্রোপচারের পর নিয়ামুল তাকে চারটি সেলাই দেন এবং নিজেই প্রেসক্রিপশন লিখে দেন। ঘটনার ১৫ দিন পর অস্ত্রোপচারস্থলে মারাত্মক সংক্রমণ দেখা দেয়। পরবর্তীতে গত ৪ ডিসেম্বর ফরিদপুর সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসকের মাধ্যমে তার সংক্রমিত স্তনের একটি বড় অংশ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। বর্তমানে তিনি ওই ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ামুল শেখ দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভুল কাজ করেছেন বলে স্বীকার করেন।
এদিকে সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানের সবার অজান্তে তিনি এই কাজটি করেছে। তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।
ফরিদপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন বদরুদ্দোজাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন মাহামুদুল হাসান বলেন, তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে এবং প্রতিবেদন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জহির হোসেন/আরকে