আব্বুকে ওরা কোথায় নিয়ে গেল?

‘আমার আব্বুকে ওরা কোথায় নিয়ে গেল, আমার আব্বুকে ওরা কোথায় নিয়ে গেল’ বলে বুক চাপড়ে কাঁদছিল জীবন আহমেদ (১০)। বারবার মূর্ছা যাচ্ছিল শিশুটি। স্বজনরা কেউ তার মাথায় পানি ঢালছিলেন, কেউ সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। একপর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যায় শিশুটি। মঙ্গলবার (০৬ এপ্রিল) রাতে নাটোরের বড়াইগ্রাম হাসপাতাল চত্বরের দৃশ্য এটি।
ওই দিন সুদের পাঁচ হাজার টাকার জন্য সৎভাই, ভাবি ও বোন মিলে বড়াইগ্রামের চকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের ছেলে মনিরুল ইসলামকে (৩৪) পিটিয়ে হত্যা করেন। উপজেলার বড়াইগ্রাম ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জীবন আহমেদ মনিরুলের বড় ছেলে। বাবাকে হারিয়ে জীবন কেঁদেছে, কাঁদিয়েছে সবাইকে। হাসপাতাল থেকে যখন বাবার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হচ্ছিল তখন তার কান্নায় সবার চোখে পানি আসে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দিনমজুর মনিরুল ইসলামের দুই ছেলে। বড় ছেলে জীবন বড়াইগ্রাম শিশু একাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ছেলে সিজান আহমেদের বয়স সাড়ে তিন বছর। মনিরুল লেখাপড়া করতে না পারলেও ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করার স্বপ্ন দেখতেন। সেজন্য বেশি টাকা খরচ করে ছেলেকে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করেছেন। স্বপ্ন ছিল ছেলে লেখাপড়া শিখে জীবনে বড় হবে। কিন্তু স্বপ্নপূরণের আগেই সৎভাই মানিক হোসেন ও ভাবি শরীফা আর বোন উম্মেহানির মারধরে মৃত্যু হয় মনিরুল ইসলামের।
জীবনকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে মা রানী বেগম বলেন, সুদের উপরে পাঁচ হাজার টাকা নিলেও দুই দফায় ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি। তারপরও নাকি সুদ পরিশোধ হয়নি। সে টাকার জন্য আমার ছাগল নিয়ে গেছে তারা। শেষ পর্যন্ত আমার স্বামীকে মেরে ফেলেছে।
রানী বেগম বলেন, স্বামীই ছিল সংসারে আয়ের একমাত্র উৎস। ছেলে দুইটাকে মানুষ করার স্বপ্ন ছিল তার। এখন স্বামীহীন সংসারে কীভাবে সন্তানদের মুখে খাবার দেব? কীভাবে করাব লেখাপড়া?
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উপজেলা সভাপতি খাদেমুল ইসলাম বলেন, দিন দিন মানুষ চরম অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। তারই ধারাবাহিকতায় তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড ঘটছে। মনিরুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যার মাধ্যমে তার দুই শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেছে। অথচ কিছুটা আন্তরিক হলেই খুব সহজে সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।
বড়াইগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রহিম বলেন, এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বুধবার দাফন করা হয়েছে।
তাপস কুমার/এএম