‘আমারে রাইখ্যা তুমি কই গেলা’
পরিবারের বড় সন্তান গার্মেন্টসকর্মী সোহেল। সকালের নাস্তা সেরে, টিফিন ক্যারিয়ারে দুপুরের খাবার নিয়ে কর্মস্থলে উদ্দেশ্যে বের হন। এর কিছুক্ষণ পরেই পরিবারের কাছে খবর আসে তিনি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন। দ্রুত পরিবারের লোকজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে নিজের বুকে খুব কষ্ট হচ্ছে এই কথা বলছিলেন বারবার সোহেল। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বুকের এই কষ্ট নিয়ে মৃত্যু হয় সোহেলের।
হাসপাতালে সোহেলের মৃত্যু হলে স্বজনরা তার মরদেহ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। লাশবাহী ট্রলি নিয়ে পুলিশ ও স্বজনদের মধ্যে চলে বেশ কিছুক্ষণ টানাটানি। সোহেলের মা মাজেদা বেগম বারবার আহাজারি করে বলছিলেন, ‘আমার বাবার বুকটা কষ্ট হইতাছে। আমার পোলারে দিয়া দাও তোমরা।’
ত্রিশালের রাগামারা গ্রামের আহেদ আলীর ছেলে বখতিয়ার হোসেন সোহেল (৩৫) ভালুকার জমিরদিয়া এলাকা মাহদিন সোয়েটার্স লিমিটেড গত ২০১৫ সাল থেকে কাজ করে আসছিলেন। দুপুরের খাবার টিফিন ক্যারিয়ারে নিয়ে প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে।
নিহতের স্ত্রী আফরোজা বেগম মরদেহ নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সামনে আহাজারি করতে থাকেন। তার ৮ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। আফরোজা বেগম বলতে থাকেন, ‘আমারে রাইখ্যা তুমি কই গেলা। আমি অহন কারে নিয়ে থাকমু।’
নিহতের ভাই সুজন মিয়া বলেন, আমরা দুই ভাই একই কারখানায় কাজ করি। আমি অন্য বাসে অফিসে যাচ্ছিলাম। আমার ভাই যে বাসটিতে যাচ্ছিল তাতে বিভিন্ন গার্মেন্টসের যাত্রী ছিল। বাড়ি থেকে বের হয়ে কিছুদূর যাওয়ার পরেই দুর্ঘটনায় আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, সদরের চুরখাই ও ত্রিশাল থেকে শেরপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এসএস ট্রাভেলস নামের একটি বাসে ওঠেন গার্মেন্টসকর্মীরা। চেলেরঘাট এলাকায় যেতে বাসটির চাকা প্যাংচার হয়। এ সময় বাসটি সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে মেরামত করছিল। এতে গার্মেন্টসকর্মীরা নেমে অন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। এর মধ্যে বাসের কয়েকজন যাত্রী ইসলাম পরিবহনের আরেকটি বাসকে সিগন্যাল দিয়ে দাঁড় করান। এ সময় রাসেল গার্মেন্টসের একটি বাস এসে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী ও বাসে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন ও ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন এবং ময়মনসিংহ মেডিকেলে সোহেলসহ দুইজনের মৃত্যু হয়।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত ও ধাক্কা দেওয়া বাস দুটি আটক করে থানায় রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
উবায়দুল হক/এএএ