ভেজাল ফুলকপির বীজে কোটি টাকার লোকসান কৃষকের

আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করে স্বপ্ন দেখছিলেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার দেড় শতাধিক কৃষক। প্রত্যাশা ছিল আগাম ফুলকপির ভালো দাম পাবেন। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ভেজাল বীজের কারণে এ বছর ফুলকপিতে ফুল আসেনি। ফলে কেটে ফেলতে হচ্ছে গাছ। এতে কৃষকের ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকা।
জানা গেছে, অধিক ফলন আর অতিরিক্ত লাভের আশায় ১২০ শতাংশ জমিতে আগাম ফুলকপির আবাদ করেছিলেন বালিয়াকান্দির জামালপুর ইউনিয়নের নটাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অমৃত বৈরাগী। স্থানীয় জামালপুর বাজার থেকে জাফর বীজ ভান্ডারের সিলভার ক্রাইন নামের ২০ প্যাকেট বীজ সংগ্রহ করেন তিনি। সেই বীজ জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে বপন করেন। আশায় ছিলেন সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকেই বাজারে তুলতে পারবেন আগাম ফুলকপি। কিন্তু গাছে ফুল না আসায় সব ফুলকপি গাছ নষ্ট হয়ে গেছে।
শুধু অমৃত বৈরাগীই নয়। তার মতো জামালপুরের নটাপাড়া, খামার মাগুরা ও বৃমাগুরা গ্রামের প্রায় ১৫০ কৃষক এখন সর্বস্বান্ত। তবে বীজের ডিলার বলছেন ভিন্ন কথা। অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও কৃষকের অদক্ষতার কারণে এমন হয়েছে বলে দাবি খান বীজাগারের নূর মোহাম্মাদ শফিকুদৌল্লা স্বাধীনের। এদিকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন কৃষি বিভাগ।

সরেজমিন নটাপাড়া মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ ফুলকপি গাছ। কোনো গাছেই নেই ফুল। ফুল আসার আগেই গাছগুলো মরে যাচ্ছে। কৃষক পরের মৌসুমের ফসল উৎপাদনের জন্য মাঠ তৈরি করার লক্ষ্যে ক্ষেত থেকে ফুলকপির গাছ কেটে পাশের নালায় ফেলে দিচ্ছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, বালিয়াকান্দিতে জামালপুরের নটাপাড়া মাঠেই কেবল আগাম ফুলকপির চাষ হয়। এই কপি নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা মেটায়। এবারও ১০০ একর জমিতে আগাম ফুলকপির চাষ করেছেন তারা। ১০০ একর জমির সব ফুলকপির গাছ মরে যাচ্ছে। এতে তাদের প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি গুণতে হবে।
নটাপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী অমিতাভ সিকদার জানান, তিনি জামালপুর বাজার থেকে জাফর বীজ ভান্ডারের সিলভার ক্রাউনের ১৪ প্যাকেট বীজ কেনেন। সেই বীজ ৩ বিঘা জমিতে বপন করেন। বীজে গাছ হলেও ফুল আসেনি। এখন সব গাছ মরে যাচ্ছে। এতে তার ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জাফর বীজ ভাণ্ডার ও খান বীজাগারের মালিক কৃষকের ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ দেখে গেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে তারা দাঁড়াবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন কোনো পাত্তাই দিচ্ছেন না। ভুক্তভোগী কৃষকেরা প্রতারণার অভিযোগ এনে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানিয়েছেন।

খান বীজাগারের নূর মোহাম্মাদ শফিকুদৌল্লা স্বাধীন জানান, সিলভার ক্রাউন বীজ তিনি বিক্রি করতে চাননি। স্থানীয় কৃষকদের অনুরোধে তিনি এবার এই বীজ সংগ্রহ করেছেন। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে তিনি জাফর বীজ ভান্ডারের মালিককে জানিয়েছেন এবং মালিক নিজেই মাঠ দেখে গেছেন।
কেন ফুল আসার আগেই সব গাছ মরে যাচ্ছে এবং কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও কৃষকদের অদক্ষতার কারণে এমনটা হতে পারে। ক্ষতিপূরণ দেবেন কি না এ বিষয়ে তিনি এখনো অবগত নন।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, কৃষক যে বীজ রোপণ করেছিল সেই বীজের প্যাকেট সংগ্রহ করবেন। সংগৃহীত বীজের প্যাকেট ‘বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সিতে’ পাঠাবেন এবং এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। সকল রির্পোট হাতে পাওয়া পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কৃষক যাতে কোনো ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সে বিষয়ে তার দপ্তর কৃষকের পাশে থাকবেন।
মীর সামসুজ্জামান/এএএ