আশাতীত ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আমন ধান কাটা শুরু করেছিলেন চাষিরা। কিন্তু সেই আনন্দে ভাটা পড়েছে ধানের দামে। বাজারে ধানের যে দাম তাতে শ্রমমূল্য কিংবা লাভতো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না। তাই দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষক। তবুও বুকভরা আশা নিয়ে মাঠ থেকে ফসল গোলায় তুলতে ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণীরা।
রোববার (২২ অক্টোবর) সরেজমিনে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
দেশে ধান উৎপাদনের অন্যতম জেলা ঠাকুরগাঁও। প্রতিবছরের মতো এবারও আগাম আমন কাটা শুরু করেছে কৃষক। কিন্তু ধান বাজারে তুলতেই মাথায় হাত তাদের। এবার আশাতীত ফলন পেলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই।
সরকারি গুদামে ১ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে ধান কেনা হলেও তাদের বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।
কৃষকেরা বলছেন, বর্তমানে ধানের উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় ডিজেল, সার ও কীটনাশকের দাম থেকে শুরু করে শ্রমিকের মজুরি প্রতিটি ক্ষেত্রেই খরচ বেড়েছে। এমন অবস্থায় ধানের দাম কম পাওয়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।
সদর উপজেলার গড়েয়া বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা শাজাহান বলেন, প্রতি মণ ৮০০ টাকা দরে ৩ মণ ধান বিক্রি করছি ২ হাজার ৪০০ টাকায়। এই দামে হতাশ আমি। গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কম হলে আমরা বাঁচব কী করে? ন্যায্য দামটুকু না পাওয়ায় এবারও দেনা পরিশোধ হবে না।
কৃষকেরা জানান, গত বোরো মৌসুমে এক বিঘা (৫০ শতাংশ) জমিতে উৎপাদনের খরচ ছিল ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এ বছর আমনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ থেকে ২৩ হাজার টাকায়। এর মধ্যে ডিজেলের দাম বাড়ায় সেচ খরচ বেড়েছে বিঘাপ্রতি প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। এছাড়া বীজ, সারও কীটনাশক কিনতে দিতে হয়েছে চড়া দাম। শ্রমিকের মজুরি, মাড়াই ও পরিবহন খরচও বেড়েছে কয়েকগুণ।
কয়েক দফায় সবকিছুর দাম বাড়লেও ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকেরা। ধান বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে।
জগন্নাথপুর ইউনিয়নের কৃষক বেলাল বলেন, ৫০ শতক জমিতে এবার খরচ পড়েছে ২৩ হাজার টাকা আর ধান পেয়েছি ২৫ মণ। বাজারে কাঁচা ধান বিক্রি করেছি প্রতি মণ ৯০০ টাকা দরে ২২ হাজার ৫০০ টাকায়। সে হিসাবে আমার লোকসান হলো ১ হাজার টাকা। যারা বর্গা নিয়ে জমি চাষ করেন তাদের এবার ঋণে ডুবতে হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বছর রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লক্ষ্য ৭৫ হাজার ৯১০ মেট্রিক টন, এ বছর রোপা আমন ধান উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। আমন ধানের ফলন আশানুরূপ হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে। সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হলে বাজারে ধানের দর বেড়ে যাবে।
আরিফ হাসান/আরকে