গাছের পোকা বিক্রি করে বদলে গেছে তাদের জীবন
যে পোকা গাছের জন্য ক্ষতিকর সেই পোকা গাছ থেকে ছাড়িয়ে তা বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষেরা। শুনতে অবাক লাগলেও গত দুই বছর ধরে এ পোকা বিক্রিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন যশোরে মনিরামপুর, কেশবপুর ও ঝিকরগাছার প্রায় শতাধিক মানুষ। শুধুই স্বাবলম্বী নয়, বদলে গেছে অনেকের জীবনমান।
পোকার ব্যবসায় দালান বাড়ি-গাড়িও করেছেন অনেকে। তবে কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন- গ্রামের মানুষের কাছে ভাইরাস নামে পরিচিত এটি মূলত ভাইরাস নয়, এটি লাক্ষা পোকা। যেটি গাছের জন্য স্বল্প মাত্রায় উপকারী এবং বেশি মাত্রায় ক্ষতিকর।
সরজমিনে যশোরের মনিরামপুর ও কেশবপুরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামের মানুষেরা ভ্যান, লগা, হাঁসুয়া, দা নিয়ে বের হয় পোকা আক্রান্ত গাছের খোঁজে। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম ঘুরে ঘুরে গাছ থেকে পোকা (ভাইরাস) আক্রান্ত ডাল সংগ্রহ করে। এরপর বাড়িতে নিয়ে গেলে নারীরা দা-বটির মাধ্যমে ডাল থেকে পোকা ছাড়িয়ে সাতদিন রোদে শুকায়। গ্রামের নারীরাও প্রতি কেজি পোকা ছাড়ানোর বিনিময়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা পায়। এরপর বিক্রির উপযুক্ত হলে এ সকল পোকা কেশবপুরের কলাগাছী নামক বাজারে নিয়ে দূরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়।
পোকা ব্যবসায়ীরা জানান, প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন গাছ পোকা আক্রান্ত হয়। প্রতি মাসে প্রত্যেক ব্যবসায়ী ২-৩ মণ পোকা সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। প্রতি কেজি পোকা বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। তবে কখনো কখনো ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন বাগান মালিকের কাছ থেকে পোকা আক্রান্ত গাছ কিনতে হয়। এতে প্রতি কেজি পোকা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা মূল্য ধরে গাছ ক্রয় করতে হয়। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের লাভও কম হয়।
কেচবপুরের সন্যাগাছা গ্রামের পোকা ব্যবসায়ী আরিফ বিল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাসে ১৫-২০ দিন আমরা পোকা ভাঙতে যাই। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম ঘুরে ঘুরে পোকা আক্রান্ত গাছ খুঁজে তার ছোট ছোট ডাল ভেঙে নিয়ে আসি। এরপর বাড়িতে এনে সেগুলো থেকে পোকা ছাড়িয়ে বিক্রির উপযুক্ত করি।'
একই গ্রামের বিল্লাল সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিছুদিন আগে আমার সংসারে খুব অভাব ছিল। হঠাৎ একজন আমাকে গাছ থেকে পোকা সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য বলে। পোকার ব্যবসায় নেমে কাঙ্ক্ষিত লাভ হয়েছে। মূলত এ ব্যবসায় পুঁজি কম লাগে। লোকসানের শঙ্কাও নেই।
বিল্লাল বলেন, পোকার ব্যবসায় আমার মতো অনেকের ভাগ্য বদল হয়েছে। অনেকে বাড়ি-গাড়িও করেছেন। তারা এখন পরিবার নিয়ে ভালো আছেন।
মনিরামপুরের নেহালপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজান হোসেন বলেন, আমরা যতদূর জেনেছি যে এই পোকা দিয়ে বিভিন্ন ওষুধ, মোম, আঠা এগুলো তৈরি করা হয়।
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদরা বলছেন, এই পোকা দিয়ে বিভিন্ন উপকরণ তৈরি হলেও এটি গাছের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় এ লাক্ষা পোকার আক্রমণ হলে গাছের ক্ষতি হয়।
এ বিষয়ে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আনিসুজ্জামান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যশোরে গ্রামের প্রান্তিক মানুষেরা যেটিকে ভাইরাস বলছেন সেটি মূলত ভাইরাস নয়, এটি হলো গাছের লাক্ষা পোকা। এই পোকাগুলো সাধারণত তুত গাছে হয়ে থাকে। বর্তমানে শিশু গাছ ও বাবলা গাছেও হচ্ছে। এটি কৃষকরা গাছ থেকে ছাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
তিনি আরও বলেন, এই পোকাগুলো দিয়ে ফার্নিচারের বার্নিস, রং, রেল উপকরণসহ বিভিন্ন ওষুধ তৈরি হয়। এগুলো কৃষকরা ভারতে বিক্রি করছেন। তবে এটি গাছে অতিরিক্ত মাত্রায় হলে ক্ষতিকর এবং স্বল্প মাত্রায় গাছের জন্য উপকারী। আমরা এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করছি।
আরএআর