কাজ শুরুর আগেই ব্যয় বেড়েছে ৫৩৩ কোটি টাকা

অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার আগেই রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (রামেবি) প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৫৩৩ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানের কাজ এখনো জমি অধিগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় রামেবির ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
রামেবি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৪ জুন রামেবি স্থাপন প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয়। সে সময় নির্মাণসামগ্রীর দাম ধরা হয় ২০১৮ সালের হিসেবে। তখন এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা। এই প্রকল্প নিয়ে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরুর আগেই ডিপিপি সংশোধন করা হয়েছে। ফলে কাজ শুরুর আগেই ব্যয় বেড়েছে ৫৩৩ কোটি টাকা।
রামেবির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, আগে বরাদ্দ করা ১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা থেকে জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ খাতে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৫৮৪ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। সংশোধিত ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ডিপিপির অর্থ ছাড় হলে ভূমি অধিগ্রহণ খাতের বকেয়া ১৭২ কোটি ১৭ লাখ টাকা জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট খাতে দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সরকারি-বেসরকারি ৭৭টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের এমবিবিএস, বিডিএস, ফিজিওথেরাপি ও ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি, বিএসসি নার্সিং এবং মেডিকেল টেকনোলজি কোর্সের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এসব কোর্সের শিক্ষার্থী নিবন্ধন, পরীক্ষার ফরম পূরণ, ফলাফল তৈরিসহ সব ধরনের ডাটা এন্ট্রি কার্যক্রম সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। এছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু থেকেই পরীক্ষার খাতা কোডিং-ডিকোডিং করে মূল্যায়ন করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
রামেবি উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম মোস্তাক হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী প্রথম প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছিল। আগের মূল্যে কাজ করা সম্ভব নয়। এ কারণে ডিপিপি সংশোধন করতে হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত টাকা পেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েই অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ডিপিপি তৈরিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামো নির্মাণ প্রক্রিয়া আরও একধাপ এগিয়ে গেল। আশা করছি খুব শীঘ্রই সংশোধিত ডিপিপির টাকা পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৪ জুন রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদিত হয়। সে সময় ২০১৮ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী ডিপিপির প্রথম ধাপের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা। বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ খাতে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ৫৮৪ কোটি ট্রান্সফার করা হয়েছে। ২০২২ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী প্রথম সংশোধিত ডিপিপির ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৪০০ কোটি টাকা। যা একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধিত ডিপিপির অর্থ ছাড় হলে ভূমি অধিগ্রহণ খাতের বকেয়া ১৭২ দশমিক ১৭ কোটি টাকা রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট খাতে ন্যস্ত করা হবে।
রাজশাহী নগরীর বড় বনগ্রাম এবং পবা উপজেলার বারইপাড়া ও বাজে সিলিন্দা মৌজার প্রায় ৬৯ একর জায়গায় রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে। রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে ১২০০ শয্যার একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। ১১টি চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ৬৮টি বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি দেওয়া দেওয়া হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়া চিকিৎসা সেবার মানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম চলবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম ধাপে জমি অধিগ্রহণসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, হাসপাতাল, নার্সিং কলেজ, স্কুল, ডে-কেয়ার সেন্টার, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, ভিসির বাংলো, ডাক্তার ও নার্সিং হোস্টেল, মরচুয়ারি ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ ২১টি ভবন নির্মাণ করা হবে।
শাহিনুল আশিক/এএএ