‘কিস্তি দেব, নাকি পোড়া বাস মেরামত করবো’

সকালে কিস্তির স্যার ফোন দিয়েছিল। তিনিও বাস পুড়ানোর ঘটনা জানেন। তিনি (কিস্তির স্যার) বললেন বেশি চিন্তা ভাবনা না করতে। এই বলে ফোন রেখে দেন। গাড়ি (বাস) চললে কিস্তি দেওয়া কোনো ব্যাপার না। বাসটা পুড়ে গিয়ে চাপে পড়ে গেছেন। এখন কিস্তি দেব, নাকি বাস মেরামত করবো। মিস্ত্রি জানিয়েছে- ঠিকঠাক করে বাস সড়কে নামাতে কয়েক লাখ টাকা খরচ হবে।
সোমবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে মুঠোফোনে আক্ষেপ করে এভাবেই বলছিলেন গতকাল রোববার গোদাগাড়ীর রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে পেট্রলবোমায় পোড়া ‘শিমু নূর তাজ’ পরিবহনের মালিকের ভাই সোহেল রানা। তিনি রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। বাস পোড়ার খবরে তার ভাই জুয়েল রানা (বাস মালিক) অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে তিনি জানান।
সোহেল রানা বলেন, বাসটির পুরানো চেসিস কেনা হয়েছিল। এর আগে স্থানীয় ব্র্যাক ও প্রশিকা (এনজিও) থেকে ঋণ করা হয়। ব্র্যাক থেকে সাড়ে তিন লাখ ও প্রশিকা থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা। ঋণ বাবদ প্রতিমাসে কিস্তি হিসেবে ৫০ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয় দুই এনজিওকে। এরমধ্যে ব্র্যাক এনজিওতে ২১ হাজার ৬০০ ও প্রশিকা এনজিওতে ২৮ হাজার ৭০০ টাকা। এনজিওগুলোর লেনদেন আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। এখন ঋণের কিস্তি দিতে না পাড়লে সেই সুসম্পর্ক আর থাকবে না। তারপরেও তারা আমাদের বাস পুড়ে গেছে বিষয়টি অবগত আছেন।
তিনি বলেন, বাসটি কেনার বয়স ছয় মাস। এরপরে ধার-দেনা করে বাসের নতুন বডি করি। নতুন বডি করার বয়স তিন মাস হবে। বাস নতুনই আছে। তারমধ্যে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল। এটা শুধু আমার ক্ষতি হলো না। এ কারণে রাষ্ট্রের ক্ষতি হলো। কারণ এই বাসটা ঠিক করে সড়কে নামাতে তার ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ হবে। বাসটি সাড়ে ১২ লাখ টাকায় কেনা হয়। তারপরে বাসের বডিসহ খরচ পড়ে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা। বাসটি সড়কে নামাতে নতুন করে ধার দেনায় পড়তে হবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, মালিক সমিতি থেকে বাসের কাগজপত্র চেয়েছে। সেই কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে। তারা কেন্দ্রে যোগাযোগ করেছে। রাজশাহীর নেতারা আশ্বাস দিয়েছে ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা পাওয়া যাবে। তবে সময় লাগবে। ততদিনে কিস্তি কীভাবে দেব এই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আমরা সড়কে গাড়ি চালালে আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। গাড়ি ও যাত্রীর যেন কোনো ক্ষতি না হয়।
বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী জেলা বাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নুরুজ্জামান মোহন বলেন, বাসটি আগুনে পুড়ে গেছে। এই ঘটনায় থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত বাসের কাগজপত্র ফেডারেশনে পাঠাবো। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত হবে।
এ বিষয়ে গোদাগাড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন বলেন, বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বাসের চালক তহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাসটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
শাহিনুল আশিক/এমএএস