খুলনার ৬ আসনের তিনটিতেই নৌকার মাঝি পরিবর্তন

খুলনার ছয়টি সংসদীয় আসনের তিনটিতে চমক রেখে নৌকার মাঝি পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে দুটিতে বর্তমান সংসদ সদস্যের পরিবর্তে নতুন মুখ ও একটিতে সাবেক সংসদ সদস্যকে প্রার্থী করা হয়েছে। এছাড়া বাকি তিনটি আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যরাই পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
রোববার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এর আগে সকাল থেকে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সাক্ষাৎ করেন।
খুলনার ছয়টি আসনে নৌকার মাঝি হলেন যারা
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাসের পরিবর্তে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ননি গোপাল মন্ডল।
খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনে পুনরায় মনোনয়ন পেয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল।
খুলনা-৩ (দৌলতপুর-খালিশপুর-খানজাহান আলী) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানের পরিবর্তে প্রথমবার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন।
এছাড়া পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ। আর খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পাইকগাছা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব মো. রশীদুজ্জামান।
ননি গোপাল মন্ডল
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ননি গোপাল মন্ডল। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জয়লাভ করে এমপি হন। তবে ২০১৪ সালে ফের পঞ্চানন বিশ্বাস দলের মনোনয়ন পেয়ে জয়লাভ করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকার টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পঞ্চানন বিশ্বাস। ২০০৮ সালের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।
শেখ সালাউদ্দীন জুয়েল
বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাউদ্দীন জুয়েল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-২ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ১ লাখ ১২ হাজার ১০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পান ২৭ হাজার ৩৭৯ ভোট। এবারের নির্বাচনে পুনরায় তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
এসএম কামাল হোসেন
খুলনা-৩ (দৌলতপুর-খালিশপুর-খানজাহান আলী) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানের পরিবর্তে প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করা এসএম কামাল ছিলেন ওরাকান্দি মিড হাই স্কুল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, খুলনা মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, খুলনা জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি। জাতীয় ছাত্রলীগের পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক। ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের উপকমিটির সহ-সম্পাদক। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিকের দায়িত্ব পেয়েছেন। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর জোনাসুরে ১৯৬০ সালের ৩১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া এসএম কামাল হোসেন ১৯৭৬ সালে ওরাকান্দি মিড হাই স্কুল থেকে এসএসসি, খুলনা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন লাইব্রেরি সায়েন্স নিয়ে। সিটি ল কলেজ থেকে এলএলবি পাস করে ঢাকা বারের সদস্য হন এসএম কামাল হোসেন।
আব্দুস সালাম মুর্শেদী
খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা মারা যাওয়ার পর খুলনা-৪ (দিঘলিয়া, রূপসা ও তেরখাদা উপজেলা নিয়ে গঠিত) আসনে উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন। এবারও তাকে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সাবেক কৃতী ফুটবলার।
নারায়ন চন্দ্র চন্দ
খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ। তিনি ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন।
মো. রশীদুজ্জামান
খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পাইকগাছা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব মো. রশীদুজ্জামান। তিনি একসময়ের সিপিবির নেতা। লবণ পানিতে ঘেরবিরোধী আন্দোলনের নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত। দলীয় মনোনয়ন পেতে দীর্ঘদিন তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করেছেন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবুর পরিবর্তে এবার তিনি নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ১৮ থেকে ২১ নভেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে আওয়ামী লীগ। এই চার দিনে মোট তিন হাজার ৩৬২টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। খুলনা বিভাগের ৩৬টি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন ৪১৬ জন প্রার্থী। যার মধ্যে খুলনার ছয়টি আসনে প্রায় ৬০ জন মনোনয়ন ফরম তোলেন।
আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া সংসদ নির্বাচনের জন্য ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এমজেইউ