আজও সহকর্মী-শুভাকাঙ্ক্ষীদের হৃদয়ে ডা. মঈন

মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের চিকিৎসক মঈন উদ্দিনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। গত বছরের ১৫ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সিলেটে শুরু হয় প্রাণঘাতী করোনার ভয়াল ছোবল। এরপর ১ বছরের বেশি সময়ে সিলেটের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনসহ অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। ডা. মঈন সিলেটে করোনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে শুধু প্রথম না, তিনি ছিলেন করোনায় মৃত চিকিৎসকের মধ্যেও প্রথম ব্যক্তি।
ডা. মঈন মারা যাওয়ার আজ ১ বছর পূর্ণ হয়েছে। তার মৃত্যুতে আজও শোকে কাতর তার পরিবার, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। মৃত্যুবার্ষিকীতে তার নিজ কর্মস্থলে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকর্মীরা।
করোনা মহামারির সংক্রমণরোধে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মস্থলে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা না হলেও সারাদিনই চিকিৎসক-নার্স ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের হৃদয়ে ছিলেন তিনি।
এদিকে স্বামীকে হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ চিকিৎসক মঈনের স্ত্রী ডা. চৌধুরী রিফাত জাহানও। স্বামীহারা সংসারে সন্তানদের নিয়ে এখনো সবকিছু গুছিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। স্বামীর স্মৃতি মনে হলে এখনো কাঁদেন চৌধুরী রিফাত।
গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে নারাজ ডা. মঈনের স্ত্রী চৌধুরী রিফাত জাহান। তবে তার ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন তিনি এখনো স্বামীর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপপরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, আমরা সকালে উনাকে স্মরণ করেছি। তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সকলেই সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। কঠোর বিধিনিষেধের কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়নি।
তবে বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালেরও সব চিকিৎসক ও নার্স তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সারাদিনই তিনি আমাদের মাঝে ছিলেন। অনেকে তার কথা মনে করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
গত বছরের ১৫ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিলেট এমজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন মারা যান। তার মৃত্যুর পর সিলেটজুড়ে করোনায় মৃত্যুর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ছিলেন সিলেটের একজন মেধাবী চিকিৎসক।
মেডিসিন বিভাগের পাশাপাশি তিনি কার্ডিলজিরও চিকিৎসক ছিলেন। রোগীদের কাছে ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। তার সহজ, সরল ও সাবলীল ব্যবহার রোগীদের মুগ্ধ করত। তার গ্রামের বাড়ি ছিল সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নাদামপুর গ্রামে।
তার অকাল মৃত্যুতে সরকারের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। এছাড়া করোনায় মারা যাওয়া দেশের প্রথম চিকিৎসক মঈন উদ্দিনের নামে ‘শহীদ ডাক্তার মঈন উদ্দিন ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়েছে।
ডা. মঈনের স্ত্রী চৌধুরী রিফাতকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও ইঞ্জিনিয়ার জামিল আহমদ চৌধুরী রিজভীকে আহ্বায়ক এবং মো. খসরুজ্জামানকে সদস্য সচিব করে ট্রাস্টের কমিটি গঠন করা হয়। মানবতার কল্যাণে কাজ করার লক্ষ্য নিয়ে ট্রাস্ট গঠন করা হয়।
এদিকে, ডা. মঈনের ঘনিষ্টজন চিকিৎসক নূরুল হুদা নাঈম ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ডা. মঈনকে নিয়ে লিখতে বা কথা বলতে গেলেই আমার চোখ জলে ভরে যায়...।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক ডা. শাকিলুর রহমান বলেন, যত সময় গড়াচ্ছে আমরা চিকিৎসকদের হারাচ্ছি। গত পরশুও একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক মারা গেছেন। ডা. মঈন ছাড়া পরবর্তীতে যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
চিকিৎসকদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকারকে আরও যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, প্রত্যেক বাহিনীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল রয়েছে। রয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা কিন্তু চিকিৎসকদের জন্য কোনো হাসপাতাল নেই। চিকিৎসকদের জন্য আইসিইউ হাসপাতাল তৈরি করার আহ্বান জানাই।
তুহিন আহমদ/এমএসআর