হাসপাতালে খাবারের তালিকায় রুই-কাতলা, দেওয়া হয় পাঙাশ মাছ!

রাজবাড়ীর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভর্তি রোগীদের খাবার সরবরাহে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রোগীদের অভিযোগ, তাদের তালিকা অনুযায়ী দেওয়া হয় না খাবার। যা দেওয়া হয় তা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম এবং নিম্নমানের। রয়েছে খাবার না পাওয়ার অভিযোগও।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারের দাবি, খাবারের জন্য যে বরাদ্দ রয়েছে তাতে মানসম্মত খাবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর খাবার সরবরাহে কোনো অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সিভিল সার্জন।
সরেজমিনে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের রান্নাঘরে দেখা যায়, ভর্তি রোগীদের দুপুর আর রাতের খাবারের জন্য পাঙাশ মাছ রান্না করা হচ্ছে। যদিও খাবারের সিডিউল অনুযায়ী দেওয়ার কথা রুই অথবা কাতল আর বাজারে মাছ না পেলে পাঙাশ মাছ। তবে রাধুনী মোমেনা বেগম জানালেন, বছরজুড়ে পাঙাশ আর সিলভারকার্প মাছই খাওয়ানো হয় রোগীদের।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল থেকে রাতের খাবারের জন্য রোগী প্রতি বরাদ্দ ১৭৫ টাকা। এর মধ্যে সকালে নাস্তার জন্য ৪৯ টাকা আর দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য ১২৬ টাকা। প্রতি কেজি রুই মাছের দাম ৫০০ টাকা, কাতল ৪০০ টাকা, মুরগি ৩৬০ টাকা এবং পাঙাশ মাছ ২৯০ টাকা। আর সপ্তাহে তিন দিন মাংস আর চার দিন মাছ দেওয়ার কথা থাকলেও ছয় দিনই দেওয়া হয় পাঙাশ। এদিকে এই রান্না করা মাছ অধিকাংশ রোগীই খেতে পারে না। আবার অনেক রোগীর অভিযোগ অনেকে দুই থেকে তিন দিন ভর্তি থেকেও তারা খাবার পায় না।

খাবারের একই অবস্থা জেলার পাংশা, কালুখালী, বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও। সেখানেও গিয়ে দেখা যায়, রান্না করা হচ্ছে ছোট সাইজের সিলভারকার্প। যেটি হাসপাতালের খাবারের তালিকাতেই নেই। দরপত্রের তালিকায় ১১০ টাকা কেজির চিনি আতপ চাল, ডাব, দুধ, ঘিসহ অন্যান্য খাবার দেওয়ার কথা থাকলেও সবই কাগজে কলমে।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া এক রোগী আলমাস শেখ বলেন, হাসপাতালের খাবার অনেক নিম্নমানের। এখানে বেশির ভাগ সময়ই পাঙাশ মাছ দেওয়া হয়। আর যে ভাত দেয় তাতে একজন মানুষের পেট ভরে না।
আরেক ভর্তি রোগী সাহিদা খানম বলেন, আমি পাংশার হাবাসপুর থেকে এসে এখানে ভর্তি হয়েছি। বাইরে থেকে খাবার কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই আমার। তাই বাধ্য হয়ে হাসপাতালের খাবার নিই। কিন্তু খাবারের যে মান তাতে মুখে দেওয়া যায় না। গত ৪ দিন ধরে ভর্তি রয়েছি দুই বেলা শুধু পাঙাশ মাছ দিয়েছে। যা খেতে না পেরে ফেলে দিতে হয়েছে।
শহরের বিনোদপুর এলাকার ইসলাম শেখ বলেন, আজ তিন দিন ধরে আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু আমাকে খাবার দেওয়া হচ্ছে না। খাবার চাইলে বলে আমার জন্য নাকি খাবার বরাদ্দ নেই। তাই কষ্ট করে বাড়ি থেকে খাবার এনে খাচ্ছি।
১০ বছর ধরে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের খাবার সরবরাহ করেন ঠিকাদার ওয়াহিদুর রহমান। তিনি পাঙাশ খাওয়ানোর পক্ষে অভিনব যুক্তি দিলেন। তিনি জানালেন, রুই মাছ রান্নায় সমস্যা আর পরিমাণে কম হওয়ার কারণে পাঙাশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া রোগী প্রতি বরাদ্দকৃত ১৭৫ টাকা থেকে ভ্যাট-ট্যাক্সসহ আনুসাঙ্গিক খরচ বাদ দিলে থাকে দেড়শো টাকারও কম থাকে। এ বাজেটে তিনবেলা মানসম্মত খাবার সরবরাহ করা কঠিন। তারপরেও আমি চেষ্টা করি ভালো খাবার দেওয়ার জন্য।
সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন, রোগী প্রতিদিন তিনবেলা খাবারের জন্য বরাদ্দ ১৭৫ টাকা। বর্তমানে দ্রব্যমূলের যে ঊর্ধ্বগতি এতে তালিকা অনুযায়ী খাবার দিলে রোগীরা সেরকম পাবে না। কারণ রুই মাছের দাম বেশি। যে কারণে রোগীদের পরিমাণে একটু বেশি খাওয়ানোর জন্য রুই মাছের পরিবর্তে পাঙাশ মাছ দেওয়া হয়। রোগীরা না বুঝেই অভিযোগ করেন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোনো ঠিকাদারের তালিকার বাইরে খাবার সরবরাহের কোনো সুযোগ নেই। খাবার সরবরাহে অনিয়ম পেলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরকে