পিঠার পিঠে বদলে গেছে সোলেমানের জীবন

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরএলাহী ইউনিয়নে ৩০ বছর ধরে পিঠা বিক্রি করেন মো. সোলেমান (৫৫)। এর মাধ্যমে অভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। পিঠা বিক্রির আয় দিয়ে সাত মেয়ের মধ্যে ছয় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।
মো. সোলেমান চরএলাহী ইউনিয়নের চরএলাহী গ্রামের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সোলেমান ভুলুগো বাড়ির আব্দুল মান্নানের ছেলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চরএলাহী বাজারে প্লাস্টিকে মোড়ানো ঘরে সোলেমানের পিঠার দোকান। প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি সারা বছর পিঠা বিক্রি করে আসছেন। তিনি ধোঁয়াসহ গরম পিঠা নামাচ্ছেন আর সঙ্গে সঙ্গেই সেই পিঠা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কেউ খাচ্ছেন, কেউবা কাগজের ঠোঙায় মুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।
স্থানীয়রা জানান, সোলেমানের পিঠা মানেই অন্যরকম স্বাদ। একের পর এক লাইন ধরে পিঠা কেনেন ক্রেতারা। দূরদূরান্ত থেকেও আসেন অনেকে। গরম পিঠা খেতে বিকেল থেকে ভিড় লেগে থাকে দোকানে।
জানা যায়, নারিকেল ও খেজুর গুড়ের তৈরি ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল-মসলা পিঠা, সাদা পিঠা, তেলের পিঠা, দুধ পিঠা, মাশকলাইয়ের রুটি, নানা রকম মসলার তৈরি ধনিয়া পাতার চাটনিসহ বাহারি সব পিঠা সোলেমানের দোকানে পাওয়া যায়। এ ছাড়া সারা বছর নোয়াখালীর আঞ্চলিক সব পিঠা বিক্রি করেন সোলেমান। শীতের শুরুতে বেশি জমে উঠে পুলি পিঠা বিক্রি। শেষ বিকেল থেকেই পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
লক্ষ্মীপুরের রামগতির জয়নাল মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, সোলেমানের পিঠা ভালো হয়। আমরা রামগতি থেকে আসি এইখানে কাজের জন্য। দীর্ঘদিন ধরে আমরা তার দোকানের পিঠা খাই।

পিঠা খেতে আসা মনিরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই বাজারটা ছোট এবং গ্রাম্য এলাকা। এখানে নদী অধ্যুষিত হওয়ায় সবাই ছোট ছোট কোনো না কোনো ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবার অনেকে মাছও ধরেন। আমি এই বাজারে এলেই সোলেমানের দোকানে বসি। যেকোনো একটা আইটেম খাই। তার ব্যবহারও ভালো এবং পিঠাগুলোও সুস্বাদু।
মোহাম্মদ ওয়ালি উল্লাহ নামের আরেকজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আসছি বসুরহাট থেকে ঘুরার জন্য। এখানে এসে পিঠা খেয়েছি। এখন পেঁয়াজু খাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে।
পিঠা নিতে আসা কামরুন নাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক সময় ঘরে পিঠা বানানো হয় না। এই পিঠাগুলোর স্বাদ অনেক। তাই বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।
পিঠা বিক্রেতা সোলেমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক দূর-দূরান্তের মানুষ পিঠা খেতে আসে। নতুন চালের গুঁড়ো ও নারিকেল, চিনি, গুড় দিয়ে যত্ন সহকারে পিঠা তৈরি করি। পিঠা প্রতি পিস ৫/১০ টাকা করে বিক্রি করি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি চালের পিঠা বিক্রি হয়। শীতের পুলি-পিঠার সঙ্গে বাড়তি হিসেবে ভাপা-চিতই পিঠাও তৈরি করি। এ ছাড়া নোয়াখালীর জনপ্রিয় পিঠাগুলো সারা বছর বিক্রি করি। কিন্তু শীত এলে পিঠা বিক্রির চাপ বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ৩০ বছর ধরে পিঠা বিক্রি করি। অন্য সময় আর কাজ করতে পারি না। আগে নদীতে নৌকায় পিঠা বিক্রি করেছি। এই দোকানের উপর ভর করেই পুরো সংসার চালাচ্ছি। ছয়টা মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। আর একটা মেয়ে আছে।
চরএলাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সোলেমান দীর্ঘদিন ধরে পিঠা করে স্বাবলম্বী হয়েছে। তার আয় থেকে ছয়টা মেয়েকে সে বিয়ে দিয়েছে। আমরাও তার দোকানের পিঠা খাই। সুন্দরভাবে যেন পিঠা বিক্রি করতে পারে সেজন্য আমি তাকে সহযোগিতা করি। তার প্রতি সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
হাসিব আল আমিন/এমজেইউ