‘ব্রিজ বানাইয়া দেও, না পারলে একটা ফেরি দেও’
বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌর শহর লাগোয়া কারখানা নদী পারাপারে অন্তহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কয়েক হাজার মানুষকে। বর্ষা এলে নদীতে পানি বেশি থাকায় তীর থেকে ট্রলারে উঠতে পারে। আর শীত মৌসুমে ট্রলারে ওঠার জন্যই হাঁটতে হয় তীর থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার কাদার পথ। ফলে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। অসুস্থ, শিশু-বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারীদের পারাপার চাইলেই করা যায় না। ভুক্তভোগীরা একটি সেতুর দাবি করলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভোগান্তির অবসান হচ্ছে না।
বাকেরগঞ্জের কবাই, দুধল, দাড়িয়াল ও ফরিদপুর চার ইউনিয়নের বাসিন্দারা কবাই ইউনিয়নের ডিসি রোড হয়ে কারখানা নদী পার হয়ে উপজেলা সদরে আসেন। একই পথে পার্শ্ববর্তী বাউফল উপজেলার বাসিন্দারাও বাকেরগঞ্জ হয়ে বরিশালে যাতায়াত করেন। ফলে প্রতিদিন এই পথে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন।
কারখানা নদীর ডিসি ঘাটে ইঞ্জিনচালিত কয়েকটি ট্রলার খেয়া পারাপার করায় দীর্ঘক্ষণ তীরে অপেক্ষা করতে হয়। শীতে নদীর চরের মাঝের খালগুলো শুকিয়ে যায়। যে কারণে ঘাটে পৌঁছাতে পারে না ট্রলারগুলো। এজন্য জোয়ারের জন্য কমপক্ষে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।
ভুক্তভোগী আনিসুর রহমান বলেন, প্রায় প্রতিদিনই কাজের প্রয়োজনে আমাকে মোটরসাইকেল নিয়ে এই পথে আসতে হয়। মোটরসাইকেল নৌকায় তোলার জন্য জোয়ারের অপেক্ষা করতে হয়। নয়তো নৌকা তীরে আসতে পারে না। অত্যন্ত দুর্ভোগের মধ্যে আছি আমরা।
ষাটোর্ধ্ব পারমিতা শীল বলেন, ‘ছোডকাল দিয়া এই রহমের পান্তে (পানিতে) ভাসতে ভাসতে বড় হইছি। কারখানা খুব খারাপ নদী। এই গাঙে মোগো দুঃখের শ্যাষ নাই। সরকাররে কমু, একটা ব্রিজ বানাইয়া দেও, ব্রিজ না পারলে একটা ফেরি দেও। আর পারি না এইবেল ভাসতে।’
স্কুলশিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলেন, বাকেরগঞ্জের চারটি ইউনিয়নের পাশাপাশি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। সারা বছর আমরা ভোগান্তির মধ্যে থাকি। মেম্বার, চেয়ারম্যান, মেয়র, এমপি সবার কাছেই আমরা দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কেউ আমাদের ভোগান্তি কমাতে একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি। বর্ষা মৌসুমে এই কারখানা নদী আরও ভয়ংকর রূপ নেয়। তখন ছেলেমেয়েরা খেয়া পার হয়ে কলেজে যেতেও ভয় পায়।
স্থানীয় বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, নদীর পারে এক কিলোমিটারের মতো চর পড়েছে। এই চরের মধ্যে ছোট খালে জোয়ারের সময় পানি বাড়লে ট্রলারগুলো তীরে আসতে পারে। যখন ভাটা থাকে তখন ট্রলার আসতে পারে না। ওই সময়ে চরের কাদা মারিয়ে গিয়ে নদীতে ট্রলারে উঠতে হয়। যাদের মোটরসাইকেল আছে তারা কাদা পার হতে না পারায় সময় নষ্ট করে বসে থাকতে হয়। এছাড়া খেয়া চালকদের স্বেচ্ছাচারিতাও বেশ দুর্ভোগের সৃষ্টি করে।
কবাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহিরুল হক বাদল বলেন, কারখানা নদীতে একটি সেতু খুবই প্রয়োজন। নেতুটি হলে বাকেরগঞ্জবাসী, বাউফলের মানুষ নিরাপদে সব সময় যাতায়াত করতে পারবে। কিন্তু সেতু না থাকায় কমপক্ষে ৫০ গ্রামের মানুষ এখন ভোগান্তিতে আছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি সেতু নির্মাণের। আশা করি এবার একটি ব্যবস্থা হবে।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আবুল খায়ের মিয়া বলেন, কারখানা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিগত দিনেও সেতু নির্মাণের প্রস্তাব আমাদের ছিল। এখনো চেষ্টা করছি প্রকল্প পাসের। সেতুটি হলে এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ যেমন কমবে তেমনি এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর