এক টিলা এক বাড়ি
যতটিলা ততবাড়ি— এ যেন জুড়ির ঐতিহ্য। এক টিলায় এক বাড়ি, আরেক টিলায় আরেক বাড়ি। এভাবে কালের পরিক্রমায় গড়ে উঠেছে জনপদ। পাহাড়ের জেলা মৌলভীবাজার। সব উপজেলাতেই কমবেশি টিলা-পাহাড় রয়েছে।
সবচেয়ে বেশি টিলা জুড়ী উপজেলায়। যুগ যুগ ধরে এসব টিলায় টিলায় বসবাস করে আসছেন মানুষ। গড়ে উঠেছে জনপদ।
লোকজন পাহাড়ের টিলায় বাড়ি বানিয়ে বসবাস করেন। এক একটি টিলার উপর একটি বাড়ি দেখলে জাহাজের মতো মনে হয়। কোনো টিলার উপর নান্দনিক বাংলোবাড়ি। আবার কোনোটির উপর আধপাকা ঘর।
এই টিলার জমিতেই রয়েছে অমূল্য সম্পদ। জুড়ির টিলায় টিলায় যেমন বাড়ি তেমনি লেবু জাতীয় ফসলের বাগানও রয়েছে। জুড়ীর গোয়ালবাড়ি ইউনিয়ন যেন কমলার রাজ্য। এই ইউনিয়নের রূপাছড়া, লালছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়া, কচুরগুল গ্রামে কমলা বাগানে ভরপুর।
সেখানকার বাসিন্দা মোর্শেদ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে আমরা এখানে বসবাস করছি। আমার জন্ম এখানে। বাড়ির আঙিনায় ২৬ বছর ধরে কমলা চাষ করছি। এই কমলা দেশ-বিদেশে পৌঁছায়।
জুড়ি প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের কোনপাহাড়ি অঞ্চল থেকে নেমে আসা ছোট স্রোতধারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে জুড়ী শহরকে দুইভাগে বিভক্ত করে। এই নদীই ছিল পূর্বে ও কুলাউড়া বড়লেখা উপজেলার সীমানা। এ স্রোতধারা সূচনার দিকে জুড়ী নদী নামে পরিচিত।
এই জুড়ী নদীর কোলঘেঁষে মানুষ বসবাস শুরু করেন, গড়ে ওঠে লোকালয়। আর নদীর কিনারায় গড়ে ওঠা জনপদকেই জুড়ী অঞ্চল বলে চিহ্নিত হয়। নদীটি হাকালুকি হাওর দিয়ে কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
উপজেলার আয়তন ২২২.৯১ বর্গকিমি বা ৮৬.০৭ বর্গমাইল। উত্তরে বড়লেখা উপজেলা, পূর্বে ভারত, দক্ষিণে কুলাউড়া উপজেলা এবং পশ্চিমে হাকালুকি হাওর ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা। প্রধান ফসল ধান, পাট, চা ও কমলা।
সারি সারি টিলায় সারি সারি বাড়ি। এসব বাড়িতে বসবাস করা অনেকটা ঐতিহ্যের ধারক বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জুড়ীর টিলা জুড়ীর সম্পদ। আদিকাল থেকে জুড়ী একটি জনপদ। এই জনপদের বসবাসের ঠিকানা টিলা। টিলায় তাদের জীবন। টিলায় তাদের কর্ম। এটিই এই জনপদের ঐতিহ্য।
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আল-ইমরান রুহুল ইসলাম বলেন, মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকার কাজ করছে। ছোট ছোট টিলায় যাতায়াতের জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ অব্যাহত আছে।
এমএসআর