‘নিউজ করার দরকার নেই, দরকার পড়লে কিছু খরচ পাঠিয়ে দিচ্ছি’

জাটকা ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এসময় জেলেদের খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য সরকার কার্ডধারী জেলেদের চাল প্রদান করে থাকে। ভাসমান এসব জেলেরা ইউনিয়ন পরিষদে এসেছেন চাল নিতে। কিন্তু সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৪০ কেজি চালের পরিবর্তে ৩৬ থেকে ৩৮ কেজি প্রদান করা হয়েছে জেলের।
সাড়ে ৩৭ কেজি চাল পেয়ে ফারুক গাজী নামে এক জেলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৪০ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও কম দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান যেমন দেয়, আমাদের তেমন নিতে হয়। গরিব মানুষ আমরা, এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারি না। ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে চাল কম দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চরসেনসাস ইউনিয়ন পরিষদে সুবিধাভোগী জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। সুবিধাভোগী জেলেরা কম চাল পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।
মৎস অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, দেশে ইলিশের বৃদ্ধি বাড়াতে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সারাদেশে জাটকা ইলিশ শিকার, কেনাবেচা ও মজুত নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এসময় সরকার থেকে বেকার জেলেদের মধ্যে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই কর্মসূচির আওতায় চরসেনসাস ইউনিয়নের জাটকা ইলিশ আহরণ থেকে বিরত থাকা ১ হাজার ২৫০ জন জেলের জন্য ৪০ কেজি করে মোট ৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সোমবার সকাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের একটি কক্ষ থেকে বালতিতে করে ওজন মাপার যন্ত্র ছাড়াই অনুমান করে চাল দেওয়া হয়েছে। এসময় জেলেরা বালতিতে চাল কম দেওয়ার অভিযোগ তুললেও পরিষদের ভেতরে চাল মেপে দেননি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বালা। পরে বাইরে নিয়ে সেই চাল মাপা হলে দেখা যায় প্রত্যেককে ২ থেকে ৩ কেজি করে চাল কম হচ্ছে।
সুবিধাভোগী জেলে নরসিংহপুরের মনসুর শেখ। তিনি অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের চল্লিশ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও তারা আমাদের ৩৮ কেজি করে চাল দিয়েছে। বাটখারা দিয়ে না মেপে তারা অনুমান করে বালতি মেপে চাল দিয়েছে। চেয়ারম্যান মেপে চাল আনার সুযোগ দেননি। আমাদের মাপে কম দিয়েছে, এখন তারা যদি আমাদের কম দেয়, আমরা কী করব বলেন!
রাজু খান নামের আরেক জেলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেয়ারম্যান আনোয়ার বালা চাল দেওয়ার সময় দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি যেমন দেয় আমাদের তেমন নিতে হয়। আমরা তাদেরকে ন্যায্য চাল দেওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি।
বিষয়টি নিয়ে চরসেনসাস ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বালা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ঠিকঠাক চাল দিয়েছি। তবে মাপতে গিয়ে কোনোটায় কম বেশি হতে পারে। এ বিষয়ে নিউজ করার দরকার নেই, দরকার পড়লে আপনাকে কিছু খরচ পাঠিয়ে দিচ্ছি।
এদিকে গোপনে রেকর্ড করা একটি ভিডিওতে চাল কম দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ট্যাগ অফিসার) মুজাহিদুল বুলবুল। ওই ভিডিতে তিনি বলেন, ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। তবে চালে ঘাটতি থাকায় ন্যূনতম ৩৮ থেকে সাড়ে ৩৮ কেজি করে দেওয়া হয়েছে। যাদের কম হচ্ছে তারা আমার কাছে আসলে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হবে। যদিও তিনি পরবর্তীতে কম দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাজিবুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, খাদ্যগুদাম থেকে সঠিক পরিমাণে চাল দেওয়া হয়েছে। জেলেদের চাল কম দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি কোনো জেলেকে চাল কম দিয়ে থাকে এমন অভিযোগ আসে, সেক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাইফ রুদাদ/এমএএস