আজ পিরোজপুর হানাদারমুক্তর দিন

আজ ৮ ডিসেম্বর। পিরোজপুর বাসীর গৌরবের দিন হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই ঐতিহাসিক দিনে পাক হানাদার বাহিনীর দখলমুক্ত হয় পিরোজপুর। ঘরে ঘরে উড়ে লাল-সবুজের বিজয় পতাকা। মুক্তিকামী মানুষের বুক ভরে ওঠে স্বাধীনতার অমলিন উচ্ছ্বাসে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সারা দেশে গণহত্যা শুরু করলেও পিরোজপুরে পাক বাহিনীর প্রবেশ ঘটে আরও এক মাস পর, ৪ মে। শহরের নৌ-প্রবেশদ্বার হুলারহাট বন্দর দিয়ে ঢুকেই তারা প্রথম ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছিমপুর ও কৃষ্ণনগর গ্রামে। শুরু হয় নারকীয় তাণ্ডব অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা এবং নির্যাতনের অন্তহীন অধ্যায়। সাত মাসের দখলদারিত্বে স্থানীয় শান্তিকমিটি, রাজাকার-আলবদরদের সহযোগিতায় হত্যা করা হয় কয়েক হাজার নিরস্ত্র মানুষকে। আগুনে জ্বলে ছাই হয় অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি। লুটে নেওয়া হয় প্রায় পাঁচ হাজার মা-বোনের সম্ভ্রম।
পাক বাহিনীকে পিরোজপুর থেকে তাড়াতে সুন্দরবনের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি দল ৭ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে দুই দিক থেকে শহরে প্রবেশ করে দক্ষিণে পাড়েরহাট বন্দর, উত্তরে নাজিরপুর। মুক্তিবাহিনীর আগমনের খবর পেয়ে পাক হানাদাররা আতঙ্কে শহরের পূর্ব দিকে কচানদী বেয়ে লঞ্চ-স্টিমারে পালিয়ে বারিশালের দিকে চলে যায়।
এরও আগে স্বরূপকাঠীর পেয়ারা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের সুদৃঢ় দুর্গে পাক সেনাদের বড় আক্রমণ প্রতিহত হয়। বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা আক্রমণে পাক বাহিনী বিপর্যস্ত হয় বারবার। এ সময়ই প্রাণ দেন তৎকালীন মহাকুমা পুলিশ প্রধান ফয়জুর রহমান আহম্মেদ, দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাকুমা প্রশাসক মিজানুর রহমান, ছাত্রনেতা ফজলুল হক, পূর্ণেন্দু বাচ্চু, সেলিমসহ প্রায় ৩৫ হাজার বীর সন্তান। ভাগীরথী সাহাকে মোটরসাইকেলের পেছনে বেঁধে এক কিলোমিটার টেনে নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদাররা ইতিহাসের এক ভয়াল চিহ্ন হয়ে আছে সেই ঘটনা। অবশেষে আট মাসের দুঃস্বপ্ন শেষে ৮ ডিসেম্বর পিরোজপুর শত্রুমুক্ত হয়, মুখ তুলে দাঁড়ায় স্বাধীনতার আলোয়।
পিরোজপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক শহিদুল হক চাঁন বলেন, পিরোজপুর হানাদারমুক্ত দিবস শুধু একটা স্মরণদিবস নয় এটি আমাদের অস্তিত্বের গর্ব, শহিদদের প্রতি নতশির শ্রদ্ধা। এই দিনের তাৎপর্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে জেলা প্রশাসন এবং পিরোজপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৯টায় বর্ণাঢ্য র্যালি। র্যালিটি শহরের পুরাতন কালেক্টরেট ভবন থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বলেশ্বর খেয়াঘাট এলাকার শহিদ বেদীতে (বধ্যভূমি) গিয়ে শেষ হবে। এরপর ৯ টা ৪৫ মিনিটে শহিদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।
শাফিউল মিল্লাত/এমটিআই