অল্পতেই রেগে যেতেন, কথাও কম বলতেন সেই মেডিকেল শিক্ষক
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. রায়হান শরীফ ক্যাম্পাসে অস্ত্র প্রদর্শন ছাড়াও তিনি অনেক রাগি ছিলেন। এ ছাড়া তিনি অল্প কথা বলতেন এবং খিটখিটে স্বভাবের ছিলেন বলে তার কর্মস্থলের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
এর আগে সোমবার (৪ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তৃতীয় বর্ষের ক্লাস চলাকালীন সময়ে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে ক্লাসরুমের ভেতরে প্রভাষক ডা. রায়হান শরীফের গুলিতে আহত হন আরিফিন আমিন তমাল। শিক্ষার্থীকে গুলি করার অভিযোগে শিক্ষক রায়হান শরীফকে চাকরি থেকে অব্যাহতি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ডা. রায়হান শরীফের নামের ফেসবুক আইডি ঘেটে দেখা গেছে, সবশেষ চলতি বছরের গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি তার প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করে একটি মুখোশের ছবি দেন। সেই ছবিতে কোনো ক্যাপশন না থাকলেও মুখোশের দুই চোখে নিচের পাপড়ির অংশে লাল রক্ত বর্ণের। একই রকম লাল চিহ্ন বামপাশের কপালে রয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ১৫ নভেম্বর হাতে দুটি অস্ত্র সদৃশ ছবি পোস্ট করেন তিনি। ২০২২ সালের ৩ এপ্রিল রক্ত মাখা বক্সিংয়ের ছবি পোস্ট করেন তিনি।
ডা. রায়হান শরীফের বিষয়ে কথা হয় তার সাবেক কর্মস্থল রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ডা. রায়হান এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন কর্মচারী বলেন, এখানে কর্মরত অবস্থায় স্যারের (রায়হান শরীফ) কোনো খারাপ রিপোর্ট শুনিনি। তবে স্যার কম কথা বলতেন। দেখে মনে হতো সবসময় স্যারের মেজাজ গরম।
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষ বলেন, আমি যখন নগরের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম তখন ডা. রায়হান শরীফ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। রায়হান শরীফ একটু রাগি ছিলেন। তবে আমরা কখনও তার বিষয়ে কোনো খারাপ কথা শুনিনি।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আমিরুল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই শিক্ষক ক্যাম্পাসে এসে মাঝে মধ্যেই অস্ত্র প্রদর্শন করতেন। গতকাল (ঘটনার দিন) অনেক শিক্ষার্থীদের সামনেই ক্লাসরুমে ওই শিক্ষক তমালের পায়ে গুলি করেন। আমার কাছে ওই শিক্ষকের বিষয়ে এর আগে কেউ কখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি।
তদন্ত কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা তদন্ত করে চলে গেছেন। তদন্ত কমিটি কী কী কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা কোথাও আমাকে নিয়ে যাননি।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। এমন ঘটনা মোটেও কাম্য নয়। আমি ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমরা যতোটা ভেবেছিলাম ছেলেটা ততোটা আহত হয়নি। সেই তুলনায় সে অনেকটা ভালো আছে। তবে সে ভীষণ ভয় পেয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। এ অন্যায়কে আমরা কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেব না।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনোয়ারুল কবীর বলেন, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান রয়েছেন। তারা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। ওই শিক্ষকের বিষয়ে তার প্রতিষ্ঠান প্রধান ভালো বলতে পারবেন। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান যদি প্রয়োজন মনে করে আমাদের জানান। আমরা বিষয়টি দেখব।
শাহিনুল আশিক ও শুভ কুমার ঘোষ/এএএ