বিষ দিয়ে বিপন্ন পাখি ‘কালোমাথা কাস্তেচরা’ মেরে জবাই করছে শিকারিরা
তরমুজ ক্ষেতের পাশে কিছু দিন পর্যন্ত কয়েকটি দুর্লভ প্রজাতির কালোমাথা কাস্তেচরা পাখি প্রতিনিয়ত আসতে শুরু করে। নীচু একটি জায়গায় পানি জমে থাকায় সেখানে প্রতিনিয়ত খাবারের সন্ধানে আসছিল পাখিগুলো। বিষয়টি নজরে আসে কিছু শিকারির। তারা বিষ প্রয়োগ করে পাখিগুলোকে ধরে জবাই করে ফেলে। ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বালুর মাঠ সংলগ্ন তরমুজ ক্ষেতের কিছু চাষির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত চাষিরা একটি পাখি ধরে জবাই করার কথা শিকার করলেও বিষ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
তরমুজ ক্ষেত পাহারা দেওয়া ঘরের পাশে যেতেই চোখে পড়ে জবাইকৃত পাখির ফেলে দেওয়া অংশগুলি। এর মধ্যে বেশির ভাগই রয়েছে পশম ও নাড়ীভুঁড়ি। এ সময় তাদের ওই ঘরের মধ্যে একটি বালতিতে দেখা যায় বিষ মিশানো খাবার। এমনকি পাখি জবাই করা রক্তমাখা কাচিটিও পাওয়া গেছে তাদের ওই ঘরের মধ্যে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একব্যক্তি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে পানি জমে থাকা নীচু জায়গাটিতে ৮ থেকে ১০টি কালোমাথা কাস্তেচরা পাখি নিয়মিত আসছিল। মূলত ওরা প্রতিনিয়ত খাবারের সন্ধানেই এখানে আসত। কিন্তু এখানের তরমুজ ক্ষেতের কিছু লোকজন গতকাল একটি পাখি সম্ভবত বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্বল করে তিন থেকে চারজন মিলে দৌড়ে তাড়া করে ধরে ফেলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শী ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাখিগুলো এখানে প্রতিদিন খাবার ক্ষেতে আসে তার পাশেই নির্মাণাধীন একটি প্রজেক্টে আমি কাজ করি। আর সেই সুবাদে আমি পাখিগুলোকে গত এক সপ্তাহ পর্যন্ত এখানে আসতে দেখেছি। পাখিগুলি সত্যিই খুবই সুন্দর। কিন্তু গতকাল দেখলাম পাশের তরমুজ ক্ষেতের কিছু চাষি একটি পাখি ধরে তাদের ক্ষেতের পাশে বসেই জবাই করেছে। তবে এখন আর একটি পাখিও দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে (প্রাণী কল্যাণ সংগঠন) অ্যানিমেল লাভারস অফ পটুয়াখালীর কলাপাড়া টিমের সদস্য কে এম বাচ্চু ঢাকা পোস্টকে বলেন, কালোমাথা কাস্তেচরা দুর্লভ এই পাখিগুলো বর্তমানে তেমন একটা দেখা যায় না। তবে কুয়াকাটা সৈকতের লেম্বুরবন এলাকায় কিছু পাখি থাকে। সেখান থেকেই মূলত এদিক- সেদিক খাবারের সন্ধানে যায়।
তিনি আরও বলেন,গতকাল আমরা পাখি ধরে জবাই করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে এর সত্যতা পাই। সেখানে জবাইকৃত পাখির বিভিন্ন আলামত দেখতে পাই। এক পর্যায়ে উপস্থিত কৃষকরা একটি পাখি জবাই করেছেন বলে স্বীকারও করেন।
মহিপুর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে স্পষ্ট বলা আছে কোনো ধরনের পশু পাখি ধরা এবং মারা যাবে না। আর তারই ধারাবাহিকতায় কেউ যদি পশু পাখি শিকারের দুঃসাহস দেখায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠিন ব্যবস্থা নেব। কালোমাথা কাস্তেচরা পাখির বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমেই জানতে পারলাম। খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এসএম আলমাস/এএএ