পুলিশ মোতায়নেও থামেনি ককটেল বিস্ফোরণ
শরীয়তপুরের বিলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিজয়ী ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সেই সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
সর্বশেষ বুধবার (২৭ মার্চ) রাত ৯টার দিকে ককটেলের আঘাতে সজিব নামে এক যুবক মারাত্মক আহত হন। একই সংঘর্ষের ঘটনায় গতকালও কয়েকজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।
আহত সজিব মুন্সী (২৫) শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের মিয়া চান মুন্সী কান্দি গ্রামের মোহাম্মদ আলী মুন্সীর ছেলে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার করতে বিলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারী ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জলিল মাদবরের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে কাল সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ককটেলের শব্দে পুরো ইউনিয়ন কেঁপে ওঠে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মিয়া চান মুন্সী কান্দি গ্রামের দুই চাচাত ভাইয়ের মাঝে জমি নিয়ে মারামারি শুরু হয়। বিকেলে ওই মারামারি আব্দুল কুদ্দুস বেপারী ও জলিল মাদবর গ্রুপের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে রাতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে লুটপাট করা হয়। এতে একজনের হাত ভেঙে যায় এবং উভয় পক্ষের লোকজন আহত হয়। খবর পেয়ে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশের কয়েকটি টিম পাহারায় থাকলেও বুধবার সন্ধ্যা থেকে আবারও ককটেল বিস্ফোরণে ঘটে। এ সময় ককটেলের আঘাতে সজিব মুন্সী নামে একজন গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সজিব মুন্সীর পেটের নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
আব্দুর রহিম নামে একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিলাশপুরে কুদ্দুস চেয়ারম্যান ও জলিল মাদবর গ্রুপের সংঘর্ষ একবার শুরু হলে টানা কয়েকদিন পর্যন্ত চলে। বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত কোনো পক্ষই থামতে চায় না। একটানা কয়েকদিন ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে এলাকার শিশু ও বৃদ্ধরা ভীত হয়ে পড়ে। প্রশাসনের উচিত কঠোর থেকে কঠোর হওয়া।
বিলাশপুরের সংর্ঘষ নিয়ে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জলিল মাদবর ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত মঙ্গলবার জমি নিয়ে দুই চাচাত ভাইয়ের দ্বন্দকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যার পরে কুদ্দুস বেপারীর লোকজন বাড়িঘর লুটপাট করেছে। এসময় একজনের হাতও ভেঙে যায়। এরপর বুধবার রাতে কুদ্দুস বেপারী নিজে তার লোকজন নিয়ে এসে ককটেল মারে। ককটেলের আঘাতে আমার সমর্থক সজিব নামের একজনের নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে গেছে। আমি ঢাকায় আছি, এ ঘটনায় আমি মামলা দায়ের করব।
বিলাশপুর ইউয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহর খার কান্দি নামে একটি গ্রাম আছে। ওখানে বসে আমার ৫-৬ জন লোক চা পান করছিল। এমন অবস্থায় জলিল মাদবর গ্রুপের একদল লোক বোমা নিয়ে তাদেরকে ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে আমার লোকজন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। যতটুকু জানতে পেরেছি, ধাওয়া দিতে গিয়ে জলিল মাদবর গ্রুপের আহত ওই লোকটা বোমা নিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে গিয়েছিল। এরপর বিস্ফোরণ হয়ে সে আহত হয়। মিয়া চান মুন্সী কান্দি নামে একটি গ্রাম আছে ওই গ্রামে আমার কিছু লোকজন আছে। ওই লোকদেরকে স্বপন খা, জামাল খার ইন্ধনে বাড়িতে থাকতে দেওয়া না। গতকালকেও আমার সমর্থক গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে ককটেল মেড়ে লুট করা হয়েছে। যার আঘাতে আহত গিয়াস উদ্দিন বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রয়েছে। এরকম আরও ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। বিলাশপুরের ১৮টি গ্রামের প্রতিনিধি আমি। ইউনিয়নে মারামারি হলে আমার তো কোনো লাভ নেই, কারণ আমি জনপ্রতিনিধি। ভালো মন্দ দেখতে গেলে যদি বদনাম হয়, তাহলে তো কিছু করার নেই।
শরীয়তপুর পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আহসান হাবীব ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিলাশপুরে ককটেল বিস্ফোরণে আহতের ঘটনার সতত্যা রয়েছে। বিলাশপুরে প্রতিদিনই পুলিশের দুই থেকে তিনটি টিম মোতায়ন করা থাকে। পুলিশ যদি মোতায়ন করা না থাকত, তাহলে হয়ত আরও সংঘর্ষ ঘটত। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাইফ রুদাদ/আরকে