চাহিদা বেড়েছে চার্জার ফ্যানের, সঙ্গে দামও
ফেনীতে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। তীব্র গরমে কিছুটা প্রশান্তি পেতে চার্জার ফ্যান কিনতে সাধারণ মানুষ ভিড় করছেন ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দোকানে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে দাম বাড়িয়ে চার্জার ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ইচ্ছেমতো দামে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চাহিদা ভালো থাকায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
সোমবার (২২ এপ্রিল) ফেনী শহরের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, অসহনীয় তাপপ্রবাহের উত্তাপ থেকে বাঁচতে সামর্থ্য অনুযায়ী দোকানে ক্রেতারা বেছে নিচ্ছেন চার্জার ফ্যান ও সিলিং ফ্যান। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি বিক্রি হচ্ছে চার্জার ফ্যান। চার্জার ফ্যানের দাম গত বছরের তুলনায় আকারভেদে বেড়েছে ৩০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। সেই সঙ্গে নষ্ট হওয়া ফ্যান মেরামতেও অনেকে আবার ছুটে যাচ্ছেন পাড়া-মহল্লার ইলেকট্রিকের দোকানে। সেখানে চলছে স্বল্প অর্থে মধ্যবিত্তের খরচ কমানোর চেষ্টা।
শহরের কলেজ রোডের একটি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দোকানে চার্জার ফ্যান কিনতে আসা স্বপ্না আক্তার বলেন, গত কয়েকদিন গরমের সঙ্গে ৭-৮ ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। ফ্যানের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। তারপরও পরিবারে শিশু ও বয়োবৃদ্ধের কষ্টের কথা চিন্তা করে ফ্যান কিনতে হচ্ছে।
শাহজালাল নামে আরেক ক্রেতা বলেন, আমার দুই সন্তানের সামনে এইচএসসি ও স্নাতক পরীক্ষা। এ অবস্থায় গরম আর লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমতো পড়ালেখা হচ্ছে না। সেজন্যই চার্জার লাইট ও ফ্যান কিনতে এসেছি। দীর্ঘদিন পর কিনতে আসলেও এবার দাম কিছুটা বাড়তি মনে হচ্ছে।
শ্রাবন্তী চৌধুরী নামে আরেক ক্রেতা বলেন, সবদিক থেকে আমরা সাধারণ মানুষ একটি অস্বাভাবিক অবস্থার মধ্যে আছি। এতো গরমে বাসায় থাকার উপায় নেই। দশমাস আগে যে ফ্যান কিনেছি সেটা এখন ৪০০ টাকা বেশি। মনে হচ্ছে দোকানিরা সুযোগ বুঝেই ইচ্ছে মতো দাম নিচ্ছে। তারপরও নিরুপায় হয়ে কিনতে হচ্ছে।
শহরের সহদেবপুর এলাকার বাসিন্দা মো. মমিন মিয়া নামে এক রিকশাচালক বলেন, আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষজন তো বাড়তি টাকা দিয়ে ফ্যান-লাইট ব্যবহার করতে পারব না। গত কিছুদিন ঘরে মোমবাতি আর হাতপাখাই ভরসা।
মিজান রোডস্থ লিটন ইলেকট্রিকের স্বত্বাধিকারী নিমাই ভৌমিক বলেন, রমজান মাস থেকে বৈদ্যুতিক পাখা, চার্জার ফ্যান, আইপিএসের বিক্রি বেড়েছে। দাম কিছুটা বাড়লেও অন্যান্য পণ্যের বাজারদরের চেয়ে তুলনামূলক কম বেড়েছে। এ ছাড়া কোম্পানি দাম বাড়ালে আমাদের পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের তেমন কিছু করার থাকে না।
রংধনু ইলেকট্রিকের স্বত্বাধিকারী আমজাদ হোসেন বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে গত কিছুদিন ধরে চার্জার ফ্যান বেশি বিক্রি হচ্ছে। তবে এটি মৌসুমি ব্যবসা। শুধু গরম এলেই এ ধরনের বেচাকেনা হয়। ১২ ইঞ্চি চার্জার ফ্যান ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, ১৪ ও ১৮ ইঞ্চির ফ্যান ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হীরা ইলেকট্রিকের স্বত্বাধিকারী নুরুল করিম হীরা বলেন, চার্জার ফ্যানের দাম কিছুটা বাড়লেও সিলিং ফ্যান আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। নন-ব্যান্ড সিলিং ফ্যানের ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ব্র্যান্ডের সিলিং ফ্যানের ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে স্ট্যান্ড ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা থেকে ৮ টাকার বেশি দামে।
এদিকে চলমান দাবদাহ আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে জানান আবহাওয়া অফিস। ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মুজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগে নিম্ন থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। ফেনীতে সোমবার (২২ এপ্রিল) ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চলমান তাপপ্রবাহ আগামী মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তারেক চৌধুরী/এএএ