ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি-নবজাতকের মৃত্যু, তিন লাখ টাকায় দফারফা
নোয়াখালীর জেলা শহরে ভুল চিকিৎসায় নিহত প্রসূতি-নবজাতকের একই কবরে দাফন করা হয়েছে। রোববার (৫ মে) সকালে নোয়াখালী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের টিনের মসজিদে জানাজা শেষে মধুপুর গ্রামের কোম্পানী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানা যায়, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের জহির উদ্দিনের স্ত্রী ও নোয়াখালী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. হারুনের মেয়ে প্রসূতি শারমিন আক্তারকে (২১) মাইজদী আধুনিক হাসপাতালে ডা. আশেকা কবিরের তত্ত্বাবধানে সিজার করানো হয়। সিজারের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। নবজাতকের অবস্থা ভালো না বলে আইসিইউ হাসপাতালে রেফারের পাশাপাশি প্রসূতির রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে না বলেও আইসিইউ হাসপাতালে রেফার করেন।
শনিবার চট্রগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালে নবজাতক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি মারা যায়। এরপর স্বজনরা সন্ধ্যা ৭টার দিকে ক্ষিপ্ত হয়ে হাসপাতালে ভাঙচুর করে। এতে হাসপাতালের হুইল চেয়ার, গ্লাস, রোগীর বেডসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে সুধারাম মডেল থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়। পরে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের প্রতিনিধি দলও হাসপাতাল পরিদর্শন করে।
নিহতের বাবা মো. হারুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার এক ছেলে দুই মেয়ে। শারমিন আক্তার আমার ছোট মেয়ে। তার স্বামী দুবাই ফেরত। একসঙ্গে আমার মেয়ে ও নাতনিকে হারিয়ে আমরা সবাই শোকে কাতর। আমার স্ত্রী কোহিনূর বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
এদিকে প্রসূতি ও নবজাতকের ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিন লাখ টাকায় দফারফার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৪ মে) রাতে লিখিত কাগজের মাধ্যমে এই দফারফার ঘটনা ঘটে। কাগজে নগদ এক লাখ টাকা এবং পরবর্তীতে দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। যদিও কোনো টাকা পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন ভুক্তভোগী পরিবার।
নিহত প্রসূতি শারমিন আক্তারের ভাই আব্দুল করিম বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল আমি আমার বোনের মরদেহ নিয়ে গভীর রাতে বাড়িতে এসেছি। আমাদের সঙ্গে কোনো লেনদেনের ঘটনা ঘটেনি। আমাদের নাম নিয়ে কেউ করেছে কিনা আমাদের জানা নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্ষিপ্ত স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মাইজদী আধুনিক হাসপাতাল ঘেরাও ও ভাঙচুরের পর একটি পক্ষ সেখানে বসে টাকার বিনিময়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগী পরিবারকে তিন লাখ টাকা ও সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দেবে না বলে নিশ্চিত করে।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ উদ্দিন রয়েল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণ সম্ভব না। আমাদের ভুল না থাকলেও আমরা সমঝোতা করেছি। কাগজের মাধ্যমে আমরা এই সমঝোতা করেছি। নগদ এক লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি দুই লাখ টাকা পরবর্তীতে দেওয়া হবে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোনো লেনদেন বা বাইরে কি হলো তা দেখার বিষয় না। আমরা এসব জানি না। তবে যেহেতু বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে তাই তাৎক্ষণিক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাঈমা নুসরাত জাবীনসহ আমার প্রতিনিধি পরিদর্শন করে। তারা একটা রিপোর্ট দেবে এবং সেটার আলোকে বৃহৎ তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হাসিব আল আমিন/এএএ