১৫০০ টাকার জন্য সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পায়নি শিশুটি

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি রয়েছে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার চার বছরের শিশু মুইন। গ্রামের বাড়িতে খেলতে গিয়ে পা ভেঙে যায় শিশুটির। শনিবার (২৪ এপ্রিল) শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে একটি বেডও পেয়ে যান বলে জানান মুইনের মা তানিয়া আক্তার।
ব্যান্ডেজ করার জন্য তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত মোসলেম সবকিছু দেখে ব্যান্ডেজ করে দেবেন বলে জানান। বিনিময়ে তাকে দিতে হবে দেড় হাজার টাকা। তানিয়ার খটকা লাগে, সরকারি হাসপাতালে ব্যান্ডেজ করতে টাকা লাগবে কেন জানতে চাইলে, সেদিন মুইনের ব্যান্ডেজ করা হয়নি। অর্থোপেডিক বিভাগের ৭ নম্বর বেডে তাকে অসুস্থ অবস্থায় থাকতে হয়। মোসলেমের সঙ্গে ওই দিন আমি পাল্টা কথা বলায় ভুল স্বীকার করে আমার ননদ ও ভাই হাতে-পায়ে ধরেছে। কিন্তু মন গলেনি। ২৪ ঘণ্টা পার হলেও ছেলের ব্যান্ডেজ করে দেননি মোসলেম।
রোববার (২৫ এপ্রিল) মোসলেমকে ১২০০ টাকা দিলে ব্যান্ডেজ করে দেন। দুপুর ২টার দিকে ব্যান্ডেজ করলে ছেলেটাকে এনে বেডে শোয়াই।
তানিয়া বলেন, টাকার জন্য ব্যান্ডেজ করেননি মোসলেম। অনেক কষ্ট পেয়েছে আমার ছেলে। একটা দিন বিনা চিকিৎসায় ফেলে রেখেছেন। যখন টাকা দিয়েছি তখন চিকিৎসা দিয়েছেন।
সোমবার (২৬ এপ্রিল) ঢাকা পোস্টের কাছে এসব অভিযোগ করেছেন তানিয়া। শুধু তানিয়া নন; একই অভিযোগ করেছেন ওই ওয়ার্ডের ১০ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা থেকে আসা রোগী সাদিয়ার।
তিনি বলেন, ভর্তি হওয়ার পর ওয়ার্ডবয় সুভাষ ব্যান্ডেজের জন্য দেড় হাজার টাকা জমা দিতে বলেন। কোথায় টাকা দিতে হবে বললে, জানান তার কাছেই দিতে হবে। আমরা এক হাজার টাকা দিতে চেয়েছি। তাতে রাজি হননি। শেষে ১২০০ টাকায় রাজি হন।
তিনি আরও বলেন, এখানে লেখা সরকারিভাবে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাব। কিন্তু পদে পদে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে চিকিৎসাই পাওয়া যায় না। আয়া-বুয়া, ব্রাদারদের টাকা দিতে হয়, ট্রলিম্যানকেও টাকা দিতে হয়। চিকিৎসক যে ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিখে দেন সেখানেই পরীক্ষা করাতে হয়। অর্থাৎ সবখানেই সিন্ডিকেট। এভাবে টাকা দিয়ে চিকিৎসা নিতে হলে সরকারি হাসপাতালের দরকার কী; গরিব মানুষ বিনা চিকিৎসায় মরে যাক।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ আহত হন বেশি। এজন্য সারা বছর অর্থোপেডিক বিভাগে চাপ থাকে রোগীদের। সেই সুবাদে ব্যান্ডেজ করার জন্য অঘোষিত মূল্য নির্ধারণ করেছেন দায়িত্বরত কর্মচারীরা। তাদের টাকা দিলে চিকিৎসা পেতে সহায়তা করেন। চাহিদামতো টাকা না দিলে ময়লা পর্যন্ত পরিষ্কার করে না। চিকিৎসাকর্মীরা রহস্যজনক আচরণ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, অর্থোপেডিক বিভাগে রোগী ভর্তির আগেই দায়িত্বরতদের সঙ্গে টাকার চুক্তি করে নিতে হয়। না হয় চিকিৎসা পাওয়া যায় না।
তবে মোসলেম বলেছেন, ব্যান্ডেজ বাবদ কোনো টাকা নিই না। কেউ খুশি হয়ে চা-পান খেতে কিছু দিলে সেটাই নিই। বাড়তি কোনো চাহিদা নেই আমার।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর আগে হাসপাতাল থেকে অবসরে গেছেন মোসলেম। এছাড়া অর্থোপেডিক বিভাগে ব্যান্ডেজ করার মতো নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ নেই। সেই সুবাদে মোসলেম দায়িত্বপালন করেন। মূলত জনবল সংকটের কারণে বহিরাগতরা হাসপাতালে দায়িত্বপালন করেন। এমন এক শ্রেণির বহিরাগত নিজেদের হাসপাতালের কর্মচারী দাবি করে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে রোগীদের জিম্মি করে রেখেছেন।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার বিনিময়ে এক টাকা দেওয়ারও বিধান নেই। কেউ যদি চিকিৎসা দেওয়ার নামে টাকা দাবি করেন তা সম্পূর্ণ অবৈধ।
তিনি বলেন, রোগীদের ব্যান্ডেজ বাবদ টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমি অবগত নই। আপনার (প্রতিবেদক) মাধ্যমে জানলাম। তবে এমন হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএম