মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিশাহারা ভ্যানচালক দেলোয়ার

পিরোজপুর সদর উপজেলার নামাজপুর গ্রামের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক দেলোয়ার শেখ (৪২)। পরিবার নিয়ে একটি টিনের ঘরে বসবাস করতেন তিনি। গত রোববা (২৬ মে) রাতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে একটি গাছ ভেঙে পড়ে তার বসতঘরের ওপর। এরপর থেকে দেলোয়ার হোসেন শেখের পরিবারের পাঁচজন সদস্য প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। শুধু দেলোয়ার হোসেন নন পিরোজপুরে রেমালের আঘাতে ২১ হাজার বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে তিন হাজার ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। তবে বেসরকারি হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সংখ্যা আরও বেশি।
শুক্রবার (৩১ মে) দেলোয়ার শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঝড়ের আঘাতে ভেঙে পড়া গাছ তার ঘরটিকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে মাটির তৈরি মেঝে। রান্না করার মাটির চুলা ভেঙে গেছে জোয়ারের পানিতে। বাড়ির পেছনে ইট দিয়ে চুলা তৈরি করে সেখানে রান্না করছেন দেলোয়ার শেখের স্ত্রী লিপি বেগম।
দেলোয়ার শেখ জানান, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে টিনের ঘর তুলে বসবাস করছিলেন তিনি। অটোরিকশা চালিয়ে যে টাকা আয় করতেন তাতে তাদের সংসার ভালোভাবেই চলছিল। ঝড়ে তার ঘরটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এখন তাদের একমাত্র মাথা গোঁজার ঠাঁই শেষ হয়ে গেছে।

দেলোয়ার শেখের স্ত্রী লিপি বেগম বলেন, বসতঘর ভেঙে যাওয়ার পর নিজেদের রক্ষার জন্য পাশের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। অন্যের বাড়ি থেকে দেওয়া খাবার খেয়ে কয়েকদিন চলেছি। আজ শুক্রবার দুপুরে ইট দিয়ে চুলা তৈরি করে সেখানে রান্না করেছি।
পিরোজপুর সদর উপজেলার কলাখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে বসতবাড়ি প্লাবিত হয়ে যায়। আমার ইউনিয়ন নদী তীরবর্তী হওয়ায় পানিতে এক হাজার বসত ঘরের মেঝে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া গাছ ভেঙে পড়ে শতাধিক ঘর ভেঙে গেছে। আমরা সরকারের কাছ থেকে এখনো কোনো সহায়তা পাইনি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর বেশির ভাগ মানুষ খুবই দরিদ্র। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর সংস্কার ও নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর জেলার সাতটি উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ৯০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছেন পাঁচজন। জেলায় তিন হাজার ঘর সম্পূর্ণ ও ১৮ হাজার ঘর আশিংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ৭ হাজার ৯৮২ হেক্টর খেতের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালে গৃহহীন মানষেরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরে রাত কাটাচ্ছেন তবে বিধ্বস্ত ঘরের বাসিন্দারা প্রতিবেশী ও স্বজনদের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। জোয়ারের পানিতে ঘরের কাঁচা মেঝের মাটি ভেঙে গেছে।
পিরোজপুর সদর উপজেলার পূর্ব ডুমুরিতলা গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে আমার ঘর ভেঙে গেছে। এরপর থেকে শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়ন পরিষদে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। নতুন করে ঘর তৈরির টাকা আমার নেই।
শারিকতলা ডুমুরিতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজমির হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নের কয়েক শ মানুষের ঘর ভেঙে গেছে। গৃহহীন চারটি পরিবার পাঁচদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা জরুরি ভিত্তিতে সরকারের কাছে গৃহহীন মানুষের জন্য ঢেউটিন বরাদ্দ চাচ্ছি।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার ফারহান ফাইয়াজ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত গৃহের সংখ্যা আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। গৃহনির্মাণের জন্য ঢেউটিন ও নগদ টাকা বরাদ্দ পেলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা করা হবে।
এএএ