দগ্ধ মেয়ের চিকিৎসা করাতে চাকরি হারিয়েছেন মা, এখনো ছুটছেন হাসপাতালে

মাত্র দুই বছর বয়সী সুমাইয়া শরীরজুড়ে পোড়া যন্ত্রণা নিয়ে ছটফট করছে। শিশুটির চিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতাল। মেয়ের পাশে থেকে সুস্থ করে তুলতে ছোটাছুটি করছেন অসহায় মা, হারিয়েছেন চাকরি। চিকিৎসার খরচ যোগাতে শেষ সম্বল গরুটিও বিক্রি করেছেন বাবা। এখনো তারা ছুটছেন হাসপাতালে।
গত ২৯ নভেম্বর সকালে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার বাইনতলা ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামে নিজ ঘরের উঠানে খেলছিল সুমাইয়া। পরিবারের অজান্তে হঠাৎ গরুর জন্য রাখা গরম পানির পাত্রে পড়ে যায় সে। মুহূর্তেই ঝলসে যায় কোমল শরীর।
পরিবারের সদস্যরা শিশুটিকে দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থার গুরুতর দেখে চিকিৎসকরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তিন দিন পর সেখানকার চিকিৎসকরাও শিশুটিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট রেফার্ড করেন। ১৯ দিন ধরে ছোট্ট সুমাইয়া সেখানে চিকিৎসাধীন। শিশুটির শরীরের প্রায় ৩৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। প্রতিটি মুহূর্তে ব্যথার চিৎকারে যেন মা-বাবার হৃদয় ফেটে যাচ্ছে।
সুমাইয়ার বড় খালা রাবেয়া বলেন, ওদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। বহু দিন ধরে আমাদের বাড়িতেই থাকে। বাবা দিনমজুরি করে, আবার কখনো সাগরে মাছ ধরতে যায়। মা গার্মেন্টসে কাজ করতো, কিন্তু মেয়ের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার কারণে চাকরিটাও হারিয়েছে। এখন চিকিৎসার খরচ চালানো তাদের পক্ষে অসম্ভব। বিত্তবান ও মানবিক হৃদয়ের মানুষের কাছে সাহায্যের হাত না বাড়ালে ওর চিকিৎসার কোনো উপায় নাই।

প্রতিবাসী রাব্বি হাসান বলেন, একটু সাহায্য, একটুখানি সহযোগিতা মেয়েটিকে নতুন করে বাঁচানোর সুযোগ দিতে পারে। মানুষের সহানুভূতি ছাড়া অন্ধকারে হারিয়ে যাব। পুরো পরিবার।
প্রতিবেশী রোজিনা আক্তার বলেন, সুমাইয়ার পরিবার আমাদের পাশেই থাকে। মা মেয়েকে বাঁচাতে প্রতিদিন দৌড়াচ্ছেন। এই ছোট্ট শিশুর জন্য আমরা সবাই আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করতে হবে। এমন পরিবারকে সহায়তা করা সবার কর্তব্য।
আরেক প্রতিবেশী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমি দেখেছি বাবা-মা কতটা কষ্টে মেয়েকে চিকিৎসা করাচ্ছেন। মেয়েটার যন্ত্রণা দেখে হৃদয় কেঁপে ওঠে। আমরা চাইলে সাহায্য করতে পারি, যাতে শিশুটি নতুন করে বাঁচার আশা পায়।
সুমাইয়ার মা সোনিয়া বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মেয়েটার জন্য চাকরি নিয়েছিলাম, একটা ভালো স্কুলে পড়াবো বলে। কিন্তু হঠাৎ এমন দুর্ঘটনা। হাসপাতালে দৌড়াতে দৌড়াতে অফিসে যেতে পারিনি, চাকরিটাও চলে গেছে। শেষ সম্বল ছিল একটি গরু, ওটাও বিক্রি করতে হয়েছে। এখন আর কিছু নেই। মেয়ের চিকিৎসার জন্য কত টাকা লাগবে জানি না। আল্লাহ জানেন, আমি কীভাবে সামলাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ডাক্তাররা বলছেন, শরীরের ৩৬ শতাংশ পুড়ে গেছে। চিকিৎসার জন্য এখন মানুষের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। মা হয়ে এটা সহ্য করা খুব কষ্টের।
শিশুটির বাবা শেখ আসাদ বলেন, আমার একমাত্র মেয়ে আমার পৃথিবী। সাগরে মাছ ধরতে ছিলাম। খবর শুনেই ছুটে এসেছি। যা ছিল সব শেষ। মানুষের কাছে চেয়ে চেয়ে মেয়ের চিকিৎসা করছি। ওর যন্ত্রণার চিৎকার শুনে মনে হয় আমি মারা যাই। আল্লাহ জানেন, আমি কতটা অসহায়।
রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুকান্ত কুমার পাল বলেন, প্রায় ১৫ দিন আগে দুই বছরের শিশুটি আমাদের কাছে গুরুতর অবস্থায় আসে। শরীরের বড় অংশ দগ্ধ হওয়ায় আমরা দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই। সেখান থেকে তাকে ঢাকা বার্ন ইউনিটে পাঠায়। তার সুস্থ হতে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও অনেক অর্থ প্রয়োজন।
রামপাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজ তামান্না ফেরদৌসীর বলেন, এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ সাহায্যের জন্য আসেননি। নিয়ম মেনে সাহায্যের জন্য আবেদন করলে অবশ্যই সহযোগিতা পাবেন।
শেখ আবু তালেব/এএমকে