সিলেট নগরীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সিলেটের আট উপজেলাসহ সিলেট নগরীর কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তবে দুইদিন পর সিলেট নগরীর বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
রোববার (২ জুন) বিকেলে সিলেট নগরীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ।
তিনি জানান, সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলার পানি নামতে শুরু করেছে। আজ বিকেল তিনটা পর্যন্ত সিলেট নগরী সংলগ্ন সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা থেকে ১ সে.মি. নিচে নেমেছে। দুপুর ১২টার পর থেকে এই পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ১০.৮০ থেকে ১ সে.মি. কমে ১০.৭৯ নিচে নেমে এসেছে। যদি বৃষ্টিপাত আর না হয় তবে এই পরিস্থিতির উন্নতি আরও দ্রুত হবে।
সিলেট নগরীর বন্যা কবলিত এলাকাসমূহ হচ্ছে-যতরপুর, কাজিরবাজার, উপশহর, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলাসহ আরও কয়েকটি এলাকা। আজ দুপুরের পর থেকে এসব এলাকার পানি কোথাও কোথাও এক থেকে দুই ফুট পর্যন্ত নেমেছে।
সিলেট নগরীর যতরপুর এলাকার বাসিন্দা রনবীর রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ (রোববার) আমাদের যতরপুর এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আমার দোকানের সামনের রাস্তায় সকাল পর্যন্ত পানি ছিল। দুপুরের পর থেকে যতরপুরের মেইন সড়কের পানি কিছু কিছু জায়গায় কমেছে।
সিলেট নগরীর বন্যা কবলিত এলাকা উপশহরের বাসিন্দা মাহমুদ হোসাইন জানান, সকালের পর থেকে উপশহরের প্রবেশ পথের পানি অনেকটা কমেছে। গতকাল যেখানে পানি ছিল আজ সেখানে শুকনো। আপাতদৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
সিলেট আবঅহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৭.৪। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় এর পরিমাণ প্রায় সমান ছিল। আবহাওয়া রৌদ্রজ্জ্বল হওয়াতে বন্যা পরিস্থিতি বেশ কিছু জায়গায় উন্নতি হচ্ছে।
পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশনায় জরুরি সভা করে নানাভাবে কর্মতৎপর রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরানসহ কর্মকর্তারা। আশ্রয় কেন্দ্র চালু এবং বানবাসীদের জন্য খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে নগর ভবন। নগরীর বন্যাকবলিত এলাকা সমূহ পরিদর্শন করেন ভারপ্রাপ্ত মেয়রসহ কর্মকর্তারা।
সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, নগরীর ১৫নং ওয়ার্ডের কিশোরী মোহন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী একটি ৫তলা খালি ভবনে দুটি আশ্রয় কেন্দ্রে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের রান্না করা খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিসিকের স্বাস্থ্য শাখার একটি চিকিৎসক দল সেখানে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এই দুটি আশ্রয় কেন্দ্রসহ বন্যা কবলিত ওয়ার্ডগুলোতে শুকনা খাবার, চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন ও কিছু কিছু ওয়ার্ডে মোমবাতি সরবরাহ করা হয়েছে। শনিবার বিকেল থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খিচুড়ি দেওয়া হয়েছে।
সাজলু লস্কর জানান, স্থানীয় কাউন্সিলর ও আমাদের নিজস্ব তথ্যমতে আনুমানিক চার হাজার পরিবার বন্যাকবলিত আছে। আজও আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার মজুদ আছে।
মাসুদ আহমদ রনি/এমএএস