অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন দুই রহিমা

নার্সের ছোট্ট একটি ভুলের কারণে তৈরি হওয়া প্রাণ সংশয় থেকে রক্ষা পেলেন চুয়াডাঙ্গার রহিমা খাতুন নামে দুই রোগী। এক রোগীর ছাড়পত্র অন্য রোগীকে দেওয়ার কারণে দুই রোগীরই প্রাণ সংশয় তৈরি হয়েছিল।
জানা গেছে, প্রস্রাব ও পেট ব্যথা সমস্যায় ভর্তি হওয়া চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দীননাথপুর গ্রামের রহিমা খাতুনের ছাড়পত্রে দেওয়া হয় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ইনস্যুলিনসহ বিভিন্ন ওষুধ সেবনের পরামর্শ। তবে এক রোগীর স্বজনের বিচক্ষণতায় ধরা পড়ে বিষয়টি। ওই রোগীর ব্যবস্থাপত্রে সঠিক ওষুধ লেখা হলেও কোনো খবর পাননি অপর রোগী।
ছাড়পত্র বদলে যাওয়ার ঘটনাটি ঘটে সোমবার (০৩ মে) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে। পরে বিকেলে এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে হাসপাতালের নার্সসহ কর্মরতদের দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দীননাথপুর গ্রামের রোগী রহিমা খাতুনের ছেলে সাকিব।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডায়াবেটিস ও কিডনিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের পীরপুরকুল্লা গ্রামের মাহির উদ্দীনের স্ত্রী রহিমা খাতুন (৫৫)। টানা ১১ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার সকালে তার ছাড়পত্র দেন ডা. এহসানুল হক তন্ময়। ছাড়পত্র পেয়ে বাড়ি ফেরার জন্য ৯ নম্বর কেবিনে গোছগাছ করছিলেন সার্জারি ওয়ার্ডের রোগী রহিমা খাতুন ও তার স্বজনরা।
ওই সময় নার্সের দেওয়া ছাড়পত্রে রোগীর ঠিকানা দেখে চমকে ওঠেন তারা। নামের মিল থাকলেও ঠিক নেই স্বামীর নাম ও ঠিকানা। তাদের বাড়ি পীরপুরকুল্লা গ্রামে হলেও সেখানে লেখা রয়েছে দীননাথপুর। পরে বিষয়টি সার্জারি ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্স সাবিনা খাতুনকে জানানোর পর বোঝা যায় ছাড়পত্র বদলে যাওয়ার বিষয়টি। সঙ্গে সঙ্গে ডা. তন্ময় গিয়ে নতুন করে ওষুধ লিখে ছাড়পত্র দেন।
অপরদিকে, ছাড়পত্র বদলে যাওয়ার বিষয়টি বুঝে ওঠার অনেক আগেই অন্যের ব্যবস্থাপত্র নিয়েই হাসপাতাল ত্যাগ করেন অপর রোগী সদর উপজেলার দীননাথপুর গ্রামের মৃত মনির হোসেনের স্ত্রী রহিমা খাতুন (৩৮)। তিনি পেট ব্যথা ও প্রস্রাবে সমস্যা নিয়ে রোববার (০২ মে) সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হন।এক দিনের মাথায় সোমবার তারও ছাড়পত্র দেন ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন।
দীননাথপুর গ্রামের রহিমা খাতুন বলেন, ১৫ বছর ধরে কিডনির রোগসহ আরও নানা রোগে ভুগছি। তারপর যদি অন্য রোগীর দেওয়া ওষুধ খাতাম তালি আমি আরও অসুস্থ হয়ে যেতাম। আমরা মুখ্য সুখ্য মানুষ। এতো কিছু তো বুঝি না। হাসপাতাল থেকি যে কাগজ দিয়েছে ওটা দেখিয়ে দুকান থেকি ওষুধ নিয়ি আইছি। এখন আল্লাহ পাকই আমাকে বাঁছাইছেন।
রহিমা খাতুনের ছেলে সাকিব সেবিকাদের দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, চিকিৎসকের দেওয়া ছাড়পত্র সব সময় আমরা নির্দ্বিধায় গ্রহণ করি। যে ওষুধই লেখা থাক না কেন সেটাই আমরা সেবনের চেষ্টা করে থাকি। আর এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে যদি নার্সদের দায়িত্বহীনতা দেখা দেয় তাহলে রোগীর সুস্থতা তো দূরের কথা, বরং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে।
প্রতিবেদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সাকিব আরও বলেন, আপনার (প্রতিবেদক) মাধ্যমেই জানতে পারলাম আমার মায়ের প্রেসক্রিপশনটা অন্যজনের। না জানলে ওই ওষুধই তাকে খাওয়ানো হতো। এখন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন বলেন, প্রস্রাব বন্ধ ও পেট ব্যথা সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া রহিমা খাতুনের চিকিৎসা আমার তত্ত্বাবধানেই চলছিল। তার ছাড়পত্রে ওষুধ আমিই লিখেছি। এক ওয়ার্ডে একই নামের দুইজন রোগী থাকায় তাদের ছাড়পত্র বদলে যায়। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
সার্জারি ওয়ার্ডের স্টাফ নার্স সাবিনা খাতুন বলেন, ছাড়পত্রের সময় আমি সুপারভাইজারের কক্ষে ছিলাম। নাসরিন নামে এক সেবিকা এমন ভুল করেছে বলে শুনেছি। অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এএসএম ফাতেহ আকরাম বলেন, দুই রোগীর একই নাম হওয়ার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। এটি আসলেই দুঃখজনক ও স্পর্শকাতর ঘটনা। দুই রোগীকেই (আজ) মঙ্গলবার হাসপাতালে আসার জন্য খবর দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমরা দেখব।
চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে দেখব। এক রোগীর ছাড়পত্র অন্য রোগীকে দেওয়ার ঘটনা আসলেই দায়িত্বে অবহেলার পরিচয়। ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে সেবিকাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। মঙ্গলবার বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেব। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য সকলকে নির্দেশ দেওয়া হবে।
অন্য রোগের ওষুধ সেবনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডায়াবেটিস নেই এমন কোনো রোগীর ইনস্যুলিন (ইনজেকশন) পুশ করলে তার ব্লাডসুগার লেভেল অনেক কমে যাবে। তবে মুখে সেবন করা কোনো ওষুধ দু’একদিন সেবন করলে তেমন কোন সমস্যা হওয়ার কথা না।
আফজালুল হক/এসপি