নির্বাচনী সহায়তায় হান্নান মাসউদকে ধান বিক্রির টাকা দিলেন কৃষক

নির্বাচনী কাজে সহযোগিতার জন্য ধান বিক্রি করে পাওয়া অর্থ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে শাপলা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হান্নান মাসউদকে দেন কৃষক আনোয়ার হোসেন বেচু। তবে হান্নান মাসউদ সেই টাকা গ্রহণ করলেও সঙ্গে সঙ্গেই কৃষকের হাতে ফেরত দিয়ে দেন।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে হাতিয়ার ওছখালী এলাকায় নির্বাচন কমিশন ও আরপিওর নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের পোস্টার-ব্যানার অপসারণের তদারকির সময় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কৃষক আনোয়ার হোসেন বেচু নলচিরা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। নদী ভাঙনে সব হারিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ভূমিহীন অবস্থায় ছিলেন। ২০১২ সালে সরকার জমি বন্দোবস্ত দিলেও নানা বাধার কারণে তা দখলে নিতে পারেননি। জুলাই বিপ্লবের পর আব্দুল হান্নান মাসউদের উদ্যোগে হাতিয়ার প্রায় ১০ হাজার ভূমিহীন তাদের জমি ফেরত পান। সেই সময়ে কৃষক বেচুও নিজের বন্দোবস্তের জমি ফিরে পান। এরপর সেই জমিতে ধান চাষ করে এবার ফসল বিক্রির পর পাওয়া অর্থের একটি অংশ তিনি কৃতজ্ঞতা হিসেবে নির্বাচনী কাজে দিতে চান। হান্নান মাসউদ টাকা গ্রহণ করে পরে আবার তার হাতেই ফেরত দেন এবং শাপলা কলি প্রতীকের পক্ষে খরচ করার কথা বলেন।
কৃষক আনোয়ার হোসেন বেচু বলেন, নদী ভাঙনে সব হারিয়ে বহু বছর ভূমিহীন হয়ে কষ্ট করেছি। সরকার জমি দিলেও নানা ঝামেলায় দখল পাইনি। জুলাই বিপ্লবের পর হান্নান মাসউদ ভাইয়ের উদ্যোগেই আমি আমার জমি ফেরত পাই। সেই জমিতে এ বছর প্রথমবারের মতো ধান তুলেছি। কৃতজ্ঞতা থেকেই ধান বিক্রির কিছু টাকা তার নির্বাচনী কাজে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করে আবার আমার হাতেই ফেরত দেন এবং এনসিপির জন্য খরচ করতে বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমার এলাকায় হান্নান মাসউদ ভাইয়ের ভোটের দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। আমরা তার জন্য প্রচারণা চালাবো। তিনি ভূমিহীনদের বন্ধু। তার মতো মানুষ রাজনীতিতে থাকলে আমাদের মতো গরিব মানুষের ভরসা আরও শক্ত হবে।
ভূমিহীন মানুষের এমন ভালোবাসা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হান্নান মাসউদ। তিনি বলেন, ভূমিহীন মানুষের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা পাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তাদের দীর্ঘদিনের কষ্ট, বঞ্চনা আর সংগ্রামের গল্প আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। জমি পাওয়ার পর আজ তারা যে হাসি ও আস্থা নিয়ে আমার পাশে দাঁড়াচ্ছেন এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
তিনি বলেন, কৃষক বেচু ভাই ধান বিক্রি করে যে টাকা আমাকে দিতে চেয়েছেন, তা শুধু টাকা নয় এটি তাদের বিশ্বাসের প্রতীক। কিন্তু এই টাকা নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি চাই তারা নিজেদের পরিবার, জমি আর ভবিষ্যতের জন্যই তা ব্যয় করুন।
জনগণের দোয়া, ভালোবাসা ও আস্থাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। শাপলা কলির পক্ষে এই মানুষের সমর্থনই আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এ সময় হাতিয়া কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মফিজ উদ্দিন আহমদ, কৃষক বেলাল উদ্দিন, এনসিপির হাতিয়া উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী শামছুল তিব্রিজ, যুবশক্তির আহ্বায়ক মো. ইউসুফ রেজা, বাগছাসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক হাফিজুর রহমানসহ ভূমিহীন মানুষজন উপস্থিত ছিলেন।
হাসিব আল আমিন/এআরবি