আম পাড়ার সময়সীমার ভালো-মন্দ দুই দিক

গাছ থেকে ফলের রাজা আম সংগ্রহ করার সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। ১৫ মে থেকে শুরু হচ্ছে রাজশাহীর আম সংগ্রহ। বৃহস্পতিবার (৬ মে) ভার্চুয়াল বৈঠকে আম সংগ্রহের সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করে রাজশাহী জেলা প্রশাসন।
তবে আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষি, কৃষি বিভাগ, আম ব্যবসায়ী, রফতানিকারক ও গবেষকদের পরামর্শ, এই জেলায় আম পাড়ার সময় নির্ধারণ বা ক্যালেন্ডার না করার। এ বিষয়ে আগামী রোববার (৯ মে) সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
গত কয়েক বছরের প্রথা ভেঙে আমচাষিদের অনুরোধে ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত বছর আম সংগ্রহের নির্ধারিত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া থেকে বিরত থাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসন। কৃষকদের প্রত্যাশা, এবারও তা বহাল থাকবে। তারা বলছেন, দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেরিতে আমের ফলন আসে। তাই সময়সীমা বেঁধে দিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আমচাষিরা।
সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গার আমচাষি মুকুল আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুনেছি বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে গাছ থেকে আম পাড়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে প্রশাসন। তারা কী করেছে, সেটা তাদের বিষয়। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বিষয়টি একেবারেই অকার্যকর। কারণ, বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে আম পাড়ার উপযুক্ত হয় না। আমের পরিপক্বতা আসা নির্ভর করে নির্দিষ্ট বছরের আবহাওয়া, বৃষ্টির পরিমাণ ও পরিবেশের ওপর।
তিনি বলেন, সবকিছু বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন গত বছর আম পাড়ার ক্যালেন্ডার নির্ধারণ করেনি। আমরা আশা করছি, এ বছরও এই সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকবে।
আমচাষি ও চাঁপাই ম্যাংগোর ব্যবস্থাপক শহিদুল হক হায়দারী ঢাকা পোস্টকে জানান, কৃষকদের জন্য আম সংগ্রহের ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দেওয়া একটি মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ, এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুমিষ্ট আমের বাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এমনকি সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় গত বছরগুলোয় কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আমচাষিদের অনুরোধের পাশাপাশি কৃষি বিভাগের পরামর্শে এ বছরও সময়সীমা বেঁধে না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ও রফতানিকারক ইসমাঈল খান শামিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে নিরাপদ আমের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য আম পাড়ার বিষয়ে ক্যালেন্ডার নির্ধারণ করা হয়। তবে এর বিপরীতে ব্যাপক লোকসানের মধ্যে পড়বেন জেলার আমচাষি, ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকরা। কারণ, সময়সীমা বেঁধে দিলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এই জেলায় আম কিনতে আসতে চান না।
তিনি আরও বলেন, সময়সীমা নির্ধারণ করলে আমচাষিরা আম পাড়া, বাজারজাত করাসহ নানা রকম সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েন। এতে গত কয়েক বছরে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আম চাষ ও ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িতরা।
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব আম গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ঢাকা পোস্টকে জানান, সময়সীমা নির্ধারণ করার ভালো-মন্দ দুটো দিকই রয়েছে। বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে একদিকে যেমন এটি প্রয়োজন, তেমনি আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে তা না করা ভালো। তবে সার্বিকভাবে সময়সীমা নির্ধারণ না করার পক্ষে এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আম পাড়ার সময়সীমা নির্ধারণ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আম কখন পরিপক্ব হবে, আর কখন গাছ থেকে সংগ্রহ করে বাজারজাত করতে হবে, এসব ব্যাপারে জেলায় আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত ভালো বোঝেন এবং সচেতন রয়েছেন। কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মনে করি।
তিনি বলেন, প্রশাসন ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর অধিক হারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলে বাজারে অপরিপক্ব ও বিষযুক্ত আম আসবে না। এমনকি গত বছরও সময়সীমা বেঁধে না দেওয়া ও অধিক পরিমাণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার সুফল পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ ঢাকা পোস্টকে জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখন পর্যন্ত আম পাড়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। রোববার (৯ মে) জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৫ মে গুটি জাতের আম সংগ্রহ করা যাবে। গোপালভোগ আম নামবে ২০ মে থেকে। এর পাঁচ দিন পর ২৫ মে থেকে নামবে লক্ষ্মণভোগ, লখনা ও রানীপছন্দ। হিমসাগর, ক্ষিরসাপাত আম নামবে আরও তিন দিন পর ২৮ মে। আগামী ৬ জুন থেকে নামবে ল্যাংড়া আম। এরপর ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি। আর মৌসুমের শেষে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ ১০ জুলাই থেকে। এ ছাড়া রঙিন আমখ্যাত বারি আম-১৪ নামবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে।
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় এব ছর প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। এসব আম বাগানে প্রায় ২৭ লাখ গাছ থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
মো. জাহাঙ্গীর আলম/এনএ