খুব কষ্টের মধ্যি আছি, কিচ্ছু খাইত পারি না

খুব কষ্টের মধ্যি আছি। কিচ্ছু খাইত পারি না। গায়ের মধ্যি জ্বালাপোড়া করে। সংসারে অভাবের জন্যি মাকে নিয়ে কষ্টে আছি। এভাবেই কষ্টের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিলেন খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাঝের আইট গ্রামের জয়নাল আবেদিন।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি জয়নাল বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছে। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছেন। বৃদ্ধ মাকে নিয়ে বসবাস করেন তিনি। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে চিকিৎসার খরচ ও পরিবার পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে তার। এ অবস্থায় বিলিভারস ফাউন্ডেশন নামে স্থানীয় একটি সংগঠন তার পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে তার চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। সেই অর্থসংস্থানের জন্য সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে তার পরিবার ও স্থানীয়রা।
অসুস্থ জয়নালের মা আমেনা বেগম বলেন, ছোটবেলায় ওর বাপ মুরি (মারা) গেছে। জয়নাল যখন সুস্থ ছিল তখন কোনো রকম চুলতো। অছুস্থ হবার পর খুব অভাবের মধ্যি দে য্যাতিসে। ঘরখান ও ভাঙা, বৃষ্টি হলি ঘরের মধ্যি পানি পড়ে। সবাই একটু যদি জয়নালের চিকিৎসা কুরতো। ও সুস্থ হলি আর অভাব থাইকতো না।
জয়নালের সহপাঠী ও বিলিভারস ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি মো. কামাল হোসেন বলেন, প্রাথমিকে পড়াকালীন একটি গল্পের সুখি মানুষ চরিত্রে অভিনয় করেছিল জয়নাল। সেটা ২৫ বছর আগের কথা। জামা থাকার পরও ক্লাসে চরিত্রের প্রয়োজনে জামাহীন (খালি গায়ে) সুখী মানুষ সাজতে হয়েছিল তাকে। টানাপোড়েন থাকলেও তখন সুখেও ছিল জয়নাল। কিন্তু আজ সত্যিই অসুস্থতা ও দারিদ্রের কষাঘাতে আইলা, আম্ফানসহ নানান রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিঃস্ব হওয়া জয়নাল আর সুখি মানুষ নেই।
বাবা গত হয়েছেন সেই শৈশবে। তিন ভাইয়ের বাকি দুই ভাই তাদের ছেলে-মেয়ে নিয়ে অভাবে সঙ্গে যুদ্ধ করে হার জিতের লড়াইয়ে ব্যস্ত। বৃদ্ধ মা জয়নালের সঙ্গে থাকেন। ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে মা ছেলের বসবাস। আইলা আম্ফানে আশ্রয় নিয়েছিল সাইক্লোন শেল্টারে। ঝড় বৃষ্টির পূর্ভাবাস পেলেই মাকে নিয়ে ছুটতে হয় আশ্রয়ের সন্ধানে। বৃষ্টিতে উঠানের মতো অবস্থা ঘরের ভেতরেও হয়।
জয়নালের ছোটবেলার এ সহপাঠী আরও বলেন, এক সময় বিকাশ ফ্লেক্সিলোড নিয়ে রাস্তার পাশে টেবিল পেতে বসতেন জয়নাল। যা আয় হতো তা দিয়ে চলে যেত মা ছেলের সংসার। কিন্তু আম্ফানের পর বাধ সাধলো অসুস্থতা। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানান রোগ। প্রতি সপ্তাহে রক্ত দিতে হয়। ধার দেনা করে কয়েকবার ডাক্তারও দেখিয়েছেন। কিন্তু তাতে তেমন কোনো ফল হয়নি। ওষুধ কিনবেন না নিজেদের তিন বেলা খাবারের বন্দোবস্ত করবেন। ডাক্তারদের ধারণা দুরারোগ্য Ulcerative Colitis এ ভুগছে জয়নাল। তবে সঠিকভাবে রোগ শনাক্ত করার জন্য ক্লোনোসকপিসহ কয়েকটি টেস্ট করা জরুরি। তারপর তার চিকিৎসা শুরু করা যাবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল ইসলাম বলেন, জয়নালরা খুবই গরিব। ঘর-বাড়ির অবস্থাও খুবি খারাপ। আমি সাধ্যমতো তাদের সহযোগিতা করেছি। তাদের জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।
বিলিভার’স ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. আরিফুর রহমান বলেন, জয়নালের বাড়িতে আমরা গিয়েছি। বাস্তবে তার অবস্থা জেনে আমরা আমাদের সেবামূলক সংগঠন বিলিভারস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসা করানোর পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি। সমাজের বিত্তবানদের এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনারাও আমাদের পাশে দাঁড়ান।
মোহাম্মদ মিলন/এমএএস