সুস্থ আছেন আরিফ, তবে চলাফেরা করতে পারেন না
সারাদিন শুয়ে থাকা বিরক্তিকর। কোটি টাকা থাকার চেয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন অনেক ভালো। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, যেন সারা জীবন সুস্থ থাকি। মঙ্গলবার (১১ মে) দুপুরে ঢাকা পোস্টকে এভাবেই কথাগুলো বলেছেন ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হওয়া কলেজশিক্ষার্থী আরিফ হোসেন।
তিনি বলেন, কীভাবে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি; মনে নেই। স্মৃতিশক্তি আগের মতো নেই। এইটুকু মনে আছে, দুর্ঘটনার পর ভাগিনা উদ্ধার করেছে। ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসায় সহযোগিতা করেছেন। উনার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি।
আরিফ হোসেনের বোন বিবি কুসুম বলেন, দুর্ঘটনার পর ঢাকায় নিলে দালালের খপ্পরে পড়ে মোহাম্মদপুরের একটি হাসপাতালে আরিফকে ভর্তি করা হয়। সেখানে অপারেশন করা হয়। তিনদিনে হাসপাতালের বিল আসে ৮০ হাজার টাকা। চিকিৎসার জন্য এত টাকা খরচ করা সম্ভব ছিল না। এ অবস্থায় আরিফের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়ে ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশ হলে ইউএস-বাংলা গ্রুপ কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। গত এক মাস ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আরিফকে ভর্তি করে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয় কর্তৃপক্ষ।
বিবি কুসুম বলেন, ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। হাসপাতালের মালিক চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করেছেন। কোনো সমস্যা হলে জানাতে বলেছেন। তবে কোনো সমস্যা হয়নি। হাসপাতালের সবাই আন্তরিক। আগের চেয়ে সুস্থ আছে আরিফ। হাসপাতালের মালিক, চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য নামাজ পড়ে সবসময় দোয়া করব আমরা।
৫ এপ্রিল বন্ধুর বাবার জানাজার নামাজ পড়তে যাওয়ার পথে কমলনগর উপজেলার করইতলা বাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় আরিফ গুরুতর আহত হন। পরে মোহাম্মদপুরের ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন দিন তিনবার তার পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। ধার করে অস্ত্রোপচারের ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করে পরিবার।
আরিফ লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। বাবা মো. সিরাজ মানসিক রোগী। কমলনগরের কাদিরপন্ডিতের হাট এলাকায় মেঘনা নদীর ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নে এসে বসবাস করছে তার পরিবার। দুর্ঘটনার ২৩ দিন আগে আরিফের মা ক্যানসারে মারা যান। অভাবী সংসারে আরিফের চিকিৎসার খরচ চালানো সম্ভব ছিল না।
এ নিয়ে ৮ এপ্রিল ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে তার পাশে দাঁড়ায় ইউএস-বাংলা গ্রুপ। ৯ এপ্রিল থেকে ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বিনামূল্যে আরিফকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ৮ মে আরিফকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফেরেন বোন কুসুম।
বাড়িতে সেবা দেওয়ার মতো কেউ না থাকায় কুসুম নিজের বাড়ি সদরের ভবানীগঞ্জের সুতারগোপ্তা এলাকার বাড়িতে আরিফকে রেখেছেন। হাসপাতালে সার্বক্ষণিক আরিফের সঙ্গে ছিলেন। ঢাকায় নিয়ে আগামী ৯ জুন তার আরও একবার অস্ত্রোপচারের সময় দিয়েছেন চিকিৎসক।
এএম