ট্রাক-পিকআপ-বাসে তিল ধারণের ঠাঁই নেই

সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বেড়েছে দূরপাল্লার যানবাহন। ঈদযাত্রায় অন্য গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে দূরপাল্লার বাসও। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বেড়ে গেছে। মঙ্গলবার (১১ মে) বিকেল থেকেই এ ভিড় শুরু হয়েছে। ট্রাফিক নির্দেশনা উপেক্ষা করে পাল্লা দিয়ে চলতে গিয়ে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
বুধবার (১২ মে) সকালে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরো এলাকা যেন লোকে লোকারণ্য। ঘরমুখো মানুষ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। কোন গাড়ি আসা মাত্রই তারা তাতে ওঠার জন্য একরকম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। মাইক্রোবাস, মিনিবাস, ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে যাত্রীরা গন্তব্যে ছুটছেন। এ সুযোগে পরিবহন শ্রমিকরাও অধিক ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে।
গাজীপুর মহানগরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকার মুদি ব্যবসায়ী মো. আইয়ুব আলী জানান, তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া এলাকায়। তিনি ভোগড়া এলাকায় সপরিবারে বাস করেন। তিনি বলেন, শুনেছি দূরপাল্লার বাস চলছে। তাই বুধবার সকালে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে জাগ্রত চৌরঙ্গীর নিচে গিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সেখানে হাজার হাজার মানুষ গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন।

তিনি আরও বলেন, কোন গাড়ি এলেই তাতে উঠার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। আমি অনেক কষ্টে ময়মনসিংহগামী সৌখিন পরিবহনের বাসে উঠতে সক্ষম হয়। উঠার সময় হেলপাররা প্রতি সিট ৪০০ টাকা এবং ছাদে ২০০ টাকা ভাড়া চায়। তারপরও ৪শ টাকার সিটেই উঠলাম। অথচ গাজীপুর থেকে সোখিন বাসে ময়মনসিংহ পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাড়া ১৫০টাকা।
এ ব্যাপারে সৌখিন বাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চালক বলেন, দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ঘরে বসেছিলাম। পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে চলছি। ধারদেনা করে সংসার চালাতে হয়েছে। আমাদের ওই ক্ষতিতো পুষিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া যাওয়ার সময় যাত্রী পাওয়া গেলেও ফেরার সময় পাব কি না বা পুলিশ আমাদের চলতে দিবে কি না সন্দেহ আছে। তাই যাত্রীদের কাছ থেকে কিছুটা বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
চান্দনা-চৌরাস্তা মোড় এলাকায় দায়িত্বরত গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) মো. মেহেদী হাসান জানান, মঙ্গলবার বিকেল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাড়ি ও মানুষের চাপ বেড়ে গেছে। এ সময় লোকাল যানবাহনের সঙ্গে মাঝে-মধ্যে দূরপাল্লার গাড়িও নেমে পড়ছে। এ চাপের মধ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এলাকায় আরও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ নিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপরও কিছু বাস রেকারে টেনে নেওয়া হয়েছে। দূরপাল্লার বাস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, অনেক কারখানায় ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় মঙ্গলবার বিকেল থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় হাজার হাজার ঘরমুখো মানুষ যানবাহনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। করোনার মহামারি ভয় তাদের কারো মধ্যেই যেন নেই। তারপরও তাদের মাস্ক ব্যবহারের জন্য সতর্ক করা হচ্ছে।
কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা থেকে গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের ওপর দিয়ে দূরপাল্লার কিছু যানবাহন চলছে। ঢাকার দিক থেকে যাত্রী বোঝাই করে দূরপাল্লার বাস আসছে। থামাতে গেলেই যানজট আরও বেড়ে যায়। তাই এখন আর দূরপাল্লার গাড়ি আটকাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, চন্দ্রা এলাকায় গাড়ি ও মানুষের প্রচুর চাপ রয়েছে। মাঝে মধ্যেই এখানে যানজট ও জনজট হচ্ছে। মঙ্গলবার অনেক কারখানা ছুটি হয়েছে। তাই চন্দ্রায় বুধবার ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে, তাদের সঙ্গে গাড়িও বেড়ে গেছে। আমরা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের জটলা যাতে সৃষ্টি না হয় তার জন্য পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা রয়েছে। চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় পুলিশের কন্ট্রোলরুম ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মহাসড়কে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। মহাসড়কে আমরা যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সতর্ক করছি।
শিহাব খান/এসপি