জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ফিরছে মানুষ

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর মাত্র একদিন বাকি। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে রাজধানী ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। ফলে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ফিরছে মানুষ। করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনায় দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও ঘরমুখো মানুষ প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও ট্রাকযোগে বাড়িতে ফিরছে।
সরেজমিনে বুধবার (১২ মে) দুপুরে রাজবাড়ী দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকে করে বাড়িতে ফিরছেন। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব।
ঘাট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুট দিয়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ফেরিযোগে পারাপার হয়েছে। সঙ্গে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল,পণ্যবাহী ট্রাক ছিল চোখে পড়ার মতো।

সুমন নামে এক যাত্রী জানান, রাজধানী ঢাকা থেকে স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পরিবার নিয়ে তিনি সাতক্ষীরা যাচ্ছেন। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে উবারে করে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে এসেছেন। তারপর ফেরিতে পার হয়ে দৌলতদিয়া প্রান্তে আসেন। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ও কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি যেতে হচ্ছে।
ট্রাকের যাত্রী আজিজুল হক জানান, তিনি ঢাকায় স্বল্প বেতনের চাকরি করেন। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে প্রাইভেটকার অথবা মাইক্রোবাসে যাওয়ার মতো সামর্থ্য তার নেই। তাই কম ভাড়া দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই তিনি ট্রাকে করে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করেতে গ্রামের বাড়ি যশোরে যাচ্ছেন। তার মতো অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে করে বাড়ি ফিরছেন।
রাজবাড়ী জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) তারক চন্দ্র পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা থেকে ট্রাকে যাত্রী আসলে রাজবাড়ী ট্রাফিক পুলিশের কিছু করার নেই। ঘাট থেকে কোনো যাত্রী ট্রাকে ওঠানো হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, মহাসড়কে যানজট রোধে পুলিশ দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। যাত্রী বা চালকরা যাতে হোটেল রেস্তোরাঁয় না থামে সেজন্য পার্কিং করতে দেওয়া হচ্ছে না।
ঈদের পর সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঈদের পরও আবারও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ঈদযাত্রায় মানুষ যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি অবহেলিত ও উপেক্ষিত করেছে তাতে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে।
বুধবার (১২ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় চীনের পাঁচ লাখ টিকা গ্রহণ করার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সরকার থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখার জন্য বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জনগণ সেই বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ঈদে বাড়িতে গিয়েছে।
শুধু ভ্যাকসিনের মাধ্যমে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, টিকা নিয়ে আপনাকে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করে ঈদ পালন করতে হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে টিকা নেওয়া একটি অন্যতম পন্থা। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত মাস্ক পরাও আরেকটি পন্থা।
করোনায় আরও ৪০ জনের মৃত্যু
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৪৫ জনে। এ সময় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ১৪০ জন। এতে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯৭ জনে।
বুধবার (১২ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৯২৮ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ১৮ হাজার ২৪৯ জন।
২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৪৬০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে ১৫ হাজার ২৯৬টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৬ লাখ ৭৭ হাজার ২২২টি। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৪০ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগেরই ১৬ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে ১৩, রাজশাহীতে ৩, রংপুরে ৩, খুলনায় ২, বরিশালে ২ এবং সিলেটে ১ জন মারা গেছেন।
মীর সামসুজ্জামান/আরএআর